ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে প্রশাসন

ইভ্যালির গ্রাহকরা যেভাবে টাকা ফেরত পেতে পারে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১, ০১:২৭ পিএম

ঢাকা : ইভ্যালির রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমাকে গ্রেফতারের পর তাদের মুক্তির দাবিতে ইভ্যালিতে বিনিয়োগ করা গ্রাহকরা বিক্ষোভ করেছেন। তারা বলছেন, তাদের বিনিয়োগ করা টাকা যদি তারা না পান তাহলে তারা গণ-আত্মহত্যা করবেন। তাদের দাবি, ইভ্যালিতে বিনিয়োগ করে এখন তারা নিঃস্ব।

তবে আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, ইভ্যালির ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য তিনটি পথ খোলা আছে। এর একটি হচ্ছে, ক্ষতিপূরণ চেয়ে দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের, দ্বিতীয়টি- দাবি আদায়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে অভিযোগ দিতে হবে। তৃতীয়- প্রতারণার জন্য বাংলাদেশ প্রতিযোগী কমিশনে অভিযোগ দিতে হবে গ্রাহকদের। একই সঙ্গে তিনটি পথই তাদের অনুসরণ করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, ই-কমার্স সংক্রান্ত আলাদা কোনো আইন না থাকায় বিদ্যমান আইনে তাদের সাজা এবং এই তিন কৌশলে টাকা ফেরত পাওয়ার জোর সম্ভাবনা আছে।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, আদালতে গ্রাহকদের টাকা ফেরত চেয়ে আবেদন করতে হবে। আদালতের নজরে বিষয়টি আনলে আদালত হয়তো বিবেচনায় নেবেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, কেউ প্রতারিত হলে সে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা করতে পারে। তবে এর আগে একটি আইন করা দরকার। কারণ ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণে আলাদা কোনো আইন দেশে নেই।

বাংলাদেশ প্রতিযোগী কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, চাইলেই কোম্পানিগুলো বাজারে অস্বাভাবিক কম মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে পারে না। প্রতিযোগী আইনে এ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ থাকায় তারা ইভ্যালির বিরুদ্ধে প্রাথমিক ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো গ্রাহকের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে নতুন করে আইনের আওতায় আনা যাবে।

এর আগে ইভ্যালির ‘সম্পদের চেয়ে ছয় গুণ বেশি দেনা’ বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়েছে ২১৪ কোটি টাকা, আর মার্চেন্টদের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য নিয়েছে ১৯০ কোটি টাকার। স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে কমপক্ষে ৪০৪ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা। কিন্তু সম্পদ আছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকার।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে প্রশাসন : ইভ্যালি-ইঅরেঞ্জের মতো প্রতারণা করছে এমন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি)।

শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার এ তথ্য জানান।

কে এম হাফিজ আরো বলেন, ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জসহ এমন আরও প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা প্রতারণা করেছে। বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্যে পণ্য বিক্রির অফার দিয়ে যারা গ্রাহকদের পণ্য দেয় না। তারা মূলত প্রতারণা করছে। এসব বিষয়ে তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এ কাজে যুক্ত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের প্রতারকদের বেশি বেশি ধরা হলে ধীরে ধীরে প্রতারণা কমে আসবে। আমরা চাই সুন্দর একটি ই-কমার্স প্লাটফর্ম ফিরে আসুক। দেশে ই-কমার্স প্রসারিত হোক।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইভ্যালির সিইও রাসেল ও তার স্ত্রী চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় একটি মামলা হয়। আরিফ বাকের নামে ইভ্যালির এক গ্রাহক মামলাটি দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর বিকেলেই রাসেলকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে তাদের র‌্যাব সদরদফতর নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম ইভ্যালির সিইও ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়ার অনুমতি দেন।

এদিকে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের মালিকপক্ষ প্রতারণামূলকভাবে গ্রাহকদের এক হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে তাহেরুল ইসলাম নামের এক গ্রাহক গুলশান থানায় এমন অভিযোগ জানিয়ে মামলা করেছেন।

মামলায় ই-অরেঞ্জের মূল মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, মালিক বীথি আকতার, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) আমানউল্লাহ চৌধুরী, প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদসহ প্রতিষ্ঠানটির সব মালিককে আসামি করা হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই