পদ্মা সেতু দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করে তুলবে: এফবিসিসিআই সভাপতি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২২, ০৩:৫১ পিএম

ঢাকা : ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, পদ্মা সেতু আমাদের অগ্রযাত্রার ঐতিহাসিক মাইলফলক। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ সেতু ব্যাপক অবদান রাখবে, ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সহজ করে তুলবে। এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি গ্রোথ আরও বেশি অগ্রসর হবে।

তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পখাতে বড় অবদান রাখবে পদ্মা সেতু। করোনা ও ইউক্রেন সংকট মোকাবিলা এবং এর প্রভাব থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সফল হওয়ায় বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ’র বসন্তকালীন সভায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে পরিণত হচ্ছে, সাহায্যে প্রাপক হওয়া থেকে দাতা হওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি আমাদের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, এই সেতু যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর, মোংলা ও পায়রা বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা আরও সহজ করবে। শিল্পদ্যোক্তাদের কাছে গুরুত্ব বাড়াবে এ বন্দরগুলোর। এতে রপ্তানি বাণিজ্য হবে আরও সহজ ও সাশ্রয়ী। পদ্মার বুকে নির্মিত স্বপ্নের সেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ অবদান রাখবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

১৯৯৯ সালে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের প্রথম মেয়াদের শেষের দিকে ৪ জুলাই ২০০১ তারিখে মাওয়া প্রান্তে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অসার ও কল্পিত দুর্নীতির অভিযোগ আর চূড়ান্ত অসহযোগিতার সমুচিত জবাব দেন এদেশের মানুষের অবিচল আস্থার প্রতীক, আশা-আকাঙ্ক্ষার শেষ আশ্রয়স্থল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাংকের ভ্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগের জবাবে বাংলাদেশ বলে দেয়, এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের কোনো অর্থ ছাড় হয়নি। অন্য কেউ অর্থ দেয়নি। দুর্নীতি হবে কীভাবে? তখন বিশ্বব্যাংক বলেছিল দুর্নীতির গভীর ষড়যন্ত্র হয়েছে। তারা দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ না করেই ২০১২ সালের ২৯ জুন বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে দেয়। 

পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফেরার জন্য বিশ্বব্যাংককে ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাংকের ঋণ প্রত্যাখ্যান করে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ২০১২ সালের জুলাইয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব তহবিল দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করবে। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি মূল সেতুর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছিলেন এদেশের মানুষের প্রতি। তার চ্যালেঞ্জ আর ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তার বিজয় হয়। বিশ্বব্যাংকের মিথ্যে অহমিকার পরাজয় ঘটে। পরে বিশ্বব্যাংক স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে, পদ্মা সেতু নির্মাণে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে তারা ভুল করেছিল। 

২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. কৌশিক বসু ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণের যে ইতিহাস তাতে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে যথেষ্ট তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থে কাজ করেছে। ১০ বছর আগেও কেউ ভাবতে পারেনি বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থে এত বড় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবে। বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরতা ছাড়াই তারা এটা করতে পারছে। ২০১৭ সালে কানাডার আদালত পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি মামলায় বিশ্বব্যাংকের দেওয়া তথ্যকে অনুমানভিত্তিক, গালগল্প ও গুজবের বেশি কিছু নয় বলে রায় দেয়। বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হয়।

সোনালীনিউজ/এনএন