ঢাকা: আয়কর রিটার্ন হলো সরকার কর্তৃক নির্ধারিত একটি কাঠামোবদ্ধ ফরম যার মধ্যে করদাতা তার আয়-ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের তথ্য লিখে আয়কর অফিসে দাখিল করেন। ব্যক্তি শ্রেণির করদাতা ও কোম্পানি করদাতাদের জন্য পৃথক রিটার্ন রয়েছে।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যাদের ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা টিআইএন রয়েছে তাদের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। তবে রিটার্ন দাখিল করলেই যে আয়কর দিতে হবে তা নয়। কারো আয় যদি করযোগ্য না হয় তাহলে কর দেওয়ার প্রয়োজন নেই, শুধু রিটার্ন জমা দিলেই হবে।
বছরে কারো আয় যদি তিন লাখ টাকার বেশি হয়, তাহলে তাকে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২১ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত আয়-ব্যয়ের হিসাব করে বার্ষিক রিটার্ন জমা দিতে হবে।
সময়মতো যারা আয়কর জমা দেন না জরিমানা সহ পরবর্তীতে নানা সমস্যায় পড়তে পারেন। জমি রেজিস্ট্রি থেকে শুরু করে ইউটিলিটি সংযোগ, ক্রেডিট কার্ডসহ ৩৮টি পরিষেবা পেতে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক।
আয়করের ব্যাপ্তি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বর্তমানে দেশে ৯০ লাখের বেশি টিআইএনধারী আছেন। ৪৩টি ক্ষেত্রে রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণপত্র লাগে। আগে টিআইএন থাকলেই হতো। এখন টিআইএন থাকলেই আপনার করযোগ্য আয় থাকুক বা না থাকুক, আপনাকে আয়কর রিটার্ন দিতে হবে, কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া। জেনে নিন, কাদের আয়কর রিটার্ন দিতে হবে এবং দিতে হবে না।
(ক) যাদের করযোগ্য আয় রয়েছে
১. কোনো ব্যক্তি করদাতার আয় যদি বছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হয়;
২. তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা, নারী ও ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের পুরুষ করদাতার আয় যদি বছরে ৪ লাখ টাকার বেশি হয়;
৩. প্রতিবন্ধী করদাতার আয় যদি বছরে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি হয়।
৪. গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় যদি বছরে ৫ লাখ টাকার বেশি হয়।
(খ) যাদের আবশ্যিকভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে:
১. করদাতার মোট আয় করমুক্ত আয়ের সীমা অতিক্রম করলে;
২. সংশ্লিষ্ট আয়বর্ষের অব্যবহিত পূর্ববর্তী তিন বছরের মধ্যে কোনো বৎসর তার কর নির্ধারণ করা হয়;
৩. কোনো ফার্ম, কোনো ব্যক্তিসংঘ ও কোনো ফার্মের অংশীদার হলে;
৪. কোম্পানির কোনো শেয়ারহোল্ডার পরিচালক বা কোনো কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার কর্মচারী হলে;
৫. গণকর্মচারী হলে;
৬. কোনো ব্যবসায় নির্বাহী বা ব্যবস্থাপকের পদধারী কোনো কর্মচারী;
৭. কেবল দাতব্য উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যতীত, সংশ্লিষ্ট আয়বর্ষে এরূপ কোনো আয়প্রাপ্ত হন বা অংশ ৬-এর প্রথম অধ্যায়ের অধীন কর অব্যাহতি বা হ্রাসকৃত কর হার সুবিধাপ্রাপ্ত।
৮. ধারা ২৬১ অনুসারে করদাতা হিসেবে নিবন্ধনযোগ্য কোনো ব্যক্তি; বা
৯. ধারা ২৬৪ অনুযায়ী রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, এমন ৪৩টি ক্ষেত্রে।
(গ) যাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক নয়:
ধারা ১৬৬ (২) অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত ব্যক্তিদের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক নয়, যথা-
(ক) কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
(অ) যা বাংলা ভাষায় পাঠদানকারী প্রাথমিক বা প্রাক্-প্রাথমিক বিদ্যালয় বা সরকারি মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় বা যা মাসিক পেমেন্ট আদেশভুক্ত (এমপিও) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; এবং
আ) যার ইংরেজি ভার্সন কারিকুলাম নেই;
(খ) সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়;
(গ) বাংলাদেশ ব্যাংক;
(ঘ) স্থানীয় কর্তৃপক্ষ;
(ঙ) সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ বা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, যার সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত তহবিল ও সুদ আয় ছাড়া অন্য আয় নেই;
(চ) আপাতত বলবৎ কোনো আইন দ্বারা বা আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত বা গঠিত যেকোনো সত্তা, যাদের সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত তহবিল ছাড়া অন্য কোনো আয় নেই;
(ছ) সরকারি ভবিষ্য তহবিল ও সরকারি পেনশন তহবিল;
(জ) কোনো অ-নিবাসী স্বাভাবিক ব্যক্তি, যার বাংলাদেশে কোনো নির্দিষ্ট ভিত্তি নেই; বা
(ঝ) বোর্ড কর্তৃক, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, রিটার্ন দাখিল করা হতে অব্যাহতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের।
সব বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী ও পেনশনভূক্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীরা যেখানে থাকছেন সেই অঞ্চলের নির্দিষ্ট সার্কেলে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। পুরোনো করদাতারা তাদের বর্তমান সার্কেলে রিটার্ন জমা দিবেন। নতুন করদাতারা তাদের নাম, চাকরিস্থল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানার ভিত্তিতে নির্ধারিত সার্কেলে ১২ সংখ্যার ই-টিআইএন উল্লেখ করে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।
করদাতারা প্রয়োজনে কাছাকাছি আয়কর অফিস বা কর পরামর্শ কেন্দ্র থেকে আয়র রিটার্ন দাখিল করার সার্কেল সম্পর্কে জানতে পারবেন। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত আয়কর মেলায় করদাতাগণ আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন। রিটার্ন দাখিলের সময় করদাতা বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসেও রিটার্ন দাখিল করতে পারেন।
এআর