ঢাকা: দেশের নিত্যপণ্যের বাজারে আবারও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। চাল, ডিম, পেঁয়াজ, আদা, এলাচ থেকে শুরু করে অধিকাংশ সবজির দাম বেড়ে গেছে একযোগে। ফলে সীমিত আয়ের মানুষজন পড়েছেন দারুণ চাপে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকাগুলোর বাজারে এই মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ সবজির দাম ৮০ টাকার নিচে নেই। পেঁপে ছাড়া কোনো সবজিই ৬০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। ঢ্যাঁড়স ও পটল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। করলা, বরবটি, কাকরোলের দাম ৮০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
বিশেষ করে কাঁচা মরিচ ও টমেটোর দাম আকাশচুম্বী। কাঁচা মরিচ ২০০ থেকে ২৪০ টাকা এবং টমেটো ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই প্রয়োজনীয় সবজি পরিমাণমতো না কিনে কমিয়ে আনতে বাধ্য হচ্ছেন।
একজন ভুক্তভোগী ক্রেতা বলেন, "প্রয়োজন মতো সবজি কিনে খাওয়াও আমাদের মতো নিম্নবিত্ত মানুষদের ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।"
মাস দেড়েক ধরে চালের বাজারেও কোনো স্বস্তি নেই। মোটা চালের দাম এখন ৬০ টাকার ওপরে। মাঝারি মানের মিনিকেট বা নাজিরশাইল চাল পাওয়া যাচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়। তবে একটু ভালো মানের চালের দাম ৭৫-৮৫ টাকা কেজি। আর ব্র্যান্ডেড চালের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে।
এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারগুলোর জন্য স্বাভাবিক খাবারের ব্যয় বহন করাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
গত এক সপ্তাহে আরও বেড়েছে পেঁয়াজ, ডিম, আদা ও এলাচের দাম। পেঁয়াজের দাম ১৫-২০ টাকা বেড়ে ৮০-৮৫ টাকায় উঠেছে। ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১২০ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪০ টাকা। আদার কেজি ১৮০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। এলাচের দামও উর্ধ্বমুখী—১০০ গ্রাম আগে ৪০০ টাকা হলেও এখন তা বেড়ে ৫৫০-৬০০ টাকায় পৌঁছেছে।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের ভরা মৌসুম শেষ হয়ে আসছে। অন্যদিকে টানা বৃষ্টিতে পেঁয়াজের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে, যা সরাসরি প্রভাব ফেলেছে খুচরা দামে।
একজন পাইকারি বিক্রেতা বলেন, পেঁয়াজের ভরা মৌসুম শেষ হয়ে আসছে। এরমধ্যে কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজের সরবরাহ পর্যায়ে বিঘ্ন ঘটেছে। বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। কয়েকদিন আগে পাইকারিতে প্রতি পাল্লা ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকায় বিক্রি করছি।
চলমান বৃষ্টিপাতের কারণে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সবজির সরবরাহ কমে গেছে। এই ঘাটতি পূরণে অনেকে বিকল্প হিসেবে ডিমের ওপর নির্ভর করছেন, যার ফলে ডিমের চাহিদা বেড়ে গেছে। আর এই চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগেই দাম বেড়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
বর্তমান বাজার পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখন আর শুধু মৌসুমি ব্যাপার নয়—বরং এটি পরিণত হয়েছে একটি ধারাবাহিক সংকটে। পণ্যের উৎপাদন, সরবরাহ, পরিবহন ও বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা থাকলে সাধারণ জনগণের কষ্ট আরও বাড়বে। সরকারের উচিত দ্রুত বাজার মনিটরিং বৃদ্ধি করা এবং প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ নেওয়া, যাতে সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পায়।
ওএফ