আইডিআরএ অভিযোগ

চার নারী থেকে অভিনব প্রতারণায় পদ্মা লাইফের দুই কর্মকর্তার অর্থ আত্মসাৎ

  • আবদুল হাকিম | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৫, ০১:৪৪ পিএম
ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা: পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে ব্রাঞ্চ ম্যানেজারসহ কয়েকটি পদে চাকরি ও উচ্চ বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে চার নারীর কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বীমা কোম্পানিটির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) সাজ্জাদ হোসেন ও জেনারেল ম্যানেজার মো. জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে। 

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা গত ৭ ও ৮ ডিসেম্বর বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। 

অভিযোগকারীরা হলেন— নিগার সুলতানা, নদীয়া আক্তার ও শাহনাজ পারভীন। এছাড়া হিমু নামের আরেক নারীর কাছ থেকেও প্রতারণা করে অর্থ নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে নিগার সুলতানার কাছ থেকে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার পদে চাকরি দেওয়ার জন্য নেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার টাকা, নদীয়া আক্তারের কাছ থেকে ইউনিট ম্যানেজার পদে চাকরি দেওয়ার জন্য ২২ হাজার ২৬০ টাকা এবং শাহনাজ পারভীনকে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার পদে চাকরি দেওয়ার জন্য নেওয়া হয়েছে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও এফএ পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে হিমু নামের আরেক নারীর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ১৩ হাজার টাকা।

আইডিআরএ অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ‘সম্ভব অ্যাপস’ নামের একটি অ্যাপে চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রধান কার্যালয়—১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, বাংলা মোটরে যোগাযোগ করেন অভিযোগকারীরা। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন বিজ্ঞাপনদাতা ছিলেন কোম্পানিটির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাজ্জাদ হোসেন এবং জেনারেল ম্যানেজার মো. জিল্লুর রহমান।

অভিযোগকারী নিগার সুলতানা জানায়, দুই কর্মকর্তা তাকে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার পদে নিয়োগের আশ্বাস দেন। ফিক্সড বেতন হিসেবে মাসে ৪০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলেন। তবে নিয়োগের শর্তে দাবি করেন ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। দর কষাকষির মাধ্যমে ভুক্তভোগী মোট ২ লাখ ৩২ হাজার টাকা পরিশোধ করেন।

অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, “টাকা নেওয়ার পর তারা আর কোনো নিয়োগপত্র দেননি। উল্টো জানান, চাকরিটি কমিশনভিত্তিক। প্রতি মাসে ১০ লাখ টাকার টার্গেট পূরণ না করলে কোনো কমিশনও দেওয়া হবে না। অর্থাৎ বেতনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা মিথ্যা।” এরপর টাকা ফেরত চাইলে তাকে জোরপূর্বক দুইটি ইন্স্যুরেন্স পলিসির কাগজ ধরিয়ে দেওয়া হয়—যা অভিযোগকারীর অনুমতি ও জ্ঞানের বাইরে তার নামে করা হয়েছে। পলিসি দুটির বিবরণ—১. ১,৮৭,৫৩০ টাকা—পলিসি নং PAA-E-1423-25 এবং ২. ৪১,২৭৫ টাকা—পলিসি নং PAA-E-1190-25।

ভুক্তভোগী চার নারী দাবি করেন, তাদের এসব পলিসি প্রতিবছর চালিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। তারা একজন গৃহিণী; কোনো উপার্জনের উৎস নেই ফলে এসব পলিসি বহন করা অসম্ভব। তাই তারা আইডিআরএ চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেওয়া আবেদনপত্রে টাকা ফেরত চেয়েছেন। একইসঙ্গে দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিও জানিয়েছেন।

পদ্মা লাইফের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে তাদের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছিল। ফিক্সড বেতন, শুক্র-শনিবার ছুটি এবং সপ্তাহে পাঁচ দিন অফিস করার শর্তসহ অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত থাকার বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছিল। এমনভাবে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছিল। তাই প্রতারণা হতে পারে—এই বিষয়টি তাদের মাথায় আসেনি।

অভিযোগের বিষয়ে মো. জিল্লুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি সোনালী নিউজকে বলেন, তাদের চাকরির কথা বলার বিষয়টি এবং প্রতিমাসে ৪০ হাজার নয় ৩০ হাজার টাকা বেতন দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বিমা কোম্পানিতে কেউ চাকরি করলে তাকে বিমা করাতে হয়। সেই হিসেবে নীগার সুলতানা বিমা পলিসি করেছে। 

চাকরি দিবেন বলে ২ লাখ ৩২ হাজার টাকা নিয়েছেন, তারপর সেই টাকায় বীমা পলিসি করিয়েছেন গ্রাহক কি জানতো প্রতিবছর তাকে এই সমপরিমাণ টাকা প্রিমিয়াম জমা দিতে হবে? এমন প্রশ্ন করলে জিল্লুর রহমান বলেন, জানতো- তবে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন তারা এর কিছুই জানতো না। তাদের পক্ষে এতো টাকা প্রতিবছর দেওয়া সম্ভব না।

এদিকে কোম্পানির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) সাজ্জাদ হোসেন সোনালী নিউজকে বলেন, আমি পদ্মা লাইফের চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। তবে এই বিষয়টি তিনি জানেন এবং বিষয়টির সাথে জিল্লুর রহমান জড়িত বলে জানান তিনি। 

সাজ্জাদ হোসেন বলেন, তিনি যখন বিষয়টি জানতে পারেন জিল্লুরের কাছে জানতে চান এবং তারা অফিসিয়ালি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। তবে ভুক্তভোগীরা এই বিষয়ে মুচলেকা দিয়েছেন দাবি করেন সাজ্জাদ হোসেন। তবে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসগুলো সোনালী নিউজকে দিবে বলে দুইদিন সময় নিলেও তিনি আর যোগাযোগ করেননি।

এই বিষয়ে জানতে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মোরশেদ আলম সিদ্দিকীকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

এ বিষয়ে আইডিআরএ’র পরামর্শক (মিডিয়া এবং যোগাযোগ) ও মুখপাত্র সাইফুন্নাহার সুমি সোনালী নিউজকে বলেন, এমন অভিযোগের ক্ষেত্রে চিঠিগুলো পর্যায়ক্রমে চেয়ারম্যানের কাছে যাবে তারপর ব্যবস্থা নিবে। তিনি বলেন, এতো এতো চিঠি সংশ্লিষ্ট জায়গায় যেতে সময় লাগে যার কারণে মাত্র দুদিন যেহেতু অভিযোগ করেছে এখনি কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এএইচ/পিএস