ছাঁটাই আতঙ্কে ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা 

  • অর্থনৈতিক প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০১৭, ১১:৫৮ এএম

ঢাকা : ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পর এবার ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। ইতিমধ্যে দুজনকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। পর্যবেক্ষণে আছেন বেশ কয়েকজন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এদিকে ইতিমধ্যেই নিয়োগ পেয়েছেন ১৬ জন। আর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রয়েছে ২৫০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা। এদিকে এমডির দায়িত্ব নেয়ার পরেই আটজন ডিএমডির নাম প্রস্তাব করে পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার যেকোনো গ্রুপ কিনতে পারবে। নিয়মে কোনো বাধা নেই। পছন্দের লোকদের বসানো হবে, এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ইসলামী ব্যাংকের এমডির অনুমোদন প্রসঙ্গে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, এমডি পরিবর্তনের বিষয়ে তারা আমাদের কাছে অনুমোদন চেয়েছে, আমরা অনুমোদন দিয়েছি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরিবর্তনের পর থেকে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে ছাঁটাই আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে বলা হয়েছে, সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কাউকে ছাঁটাই করা হবে না। এদিকে ব্যাংকের নতুন দায়িত্বে আসা ব্যক্তিদের দ্রুত নিয়োগ অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন এমডি ও চারজন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) নিয়োগের অনুমোদন নিতে গত রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি পাঠায় ইসলামী ব্যাংক। যাচাই-বাছাই শেষে দিনের মধ্যেই তাদের নিয়োগ অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

এদিকে চার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্টকে (ইভিপি) পদোন্নতি দিয়ে ডিএমডি নিয়োগ করা হয়। নতুন ডিএমডিরা হলেন কোম্পানি সচিব আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া, করপোরেট ডিভিশন-১ প্রধান মোহন মিয়া, করপোরেট ডিভিশন-২-এর প্রধান মনিরুল মওলা ও মোহাম্মদ আলী। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্যাংকের ছাঁটাই ও নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকজন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও (ডিএমডি) পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এছাড়া পর্যবেক্ষণে রয়েছেন মধ্যম সারির আরো অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা। এদিকে দ্রুত গতিতে চলছে ব্যাংকটির নিয়োগ প্রক্রিয়া। ইতিমধ্যে ১৬ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়ে বিভিন্ন শাখায় পোস্টিংও দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরো ২৫০ জনের নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে ঢাকার রমনা, হেড অফিস কমপ্লেক্স ভবন ও ফরেন এক্সচেঞ্জ শাখায় একটি করে পোস্টিং দেয়া হয়েছে। মূলত অফিসার হিসেবে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। 

নিয়োগ দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকের এক পরিচালক বলেন, এক মাস আগে বোর্ড সভায় একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নতুন লোকবলের প্রয়োজনে ছোটখাটো পোস্টে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ দিতে পারবেন। এজন্য বোর্ডের অনুমতি বা পরীক্ষা নেয়ার প্রয়োজন নেই। ওই সভায় ১০ জন নিয়োগ দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। তবে গত রবিবার ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান আরাস্তু খান বলেছিলেন, সুনির্দিষ্ট অপরাধ ছাড়া কারও চাকরি যাবে না। কিন্তু এই ঘোষণার ঠিক কয়েক ঘণ্টা পরেই ওই দুজনকে সরিয়ে দেয়া হয়। ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে গত রবিবার রাতেই এই দুই কর্মকর্তাকে ব্যাংকে আসতে নিষেধ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে দুজন এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট। গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকে নতুন নেতৃত্ব আসার পর ওই দুজনের নিয়োগের মেয়াদ আর বাড়ানো হয়নি। এ কারণে গত রবিবার রাতে তাদের ব্যাংকে না আসার জন্য বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকের বোর্ডসভায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মান্নান ও পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা আনোয়ারকে সরিয়ে দেয়া হয়।  মাত্র আট মাসের ব্যবধানে ব্যাংকটিতে নিয়োগ পান ১৬ নতুন পরিচালক।   

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই