সরল সুদে মিলবে ব্যাংকের ঋণ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০১৯, ১১:৫৪ এএম

ঢাকা : ব্যবসায়ীদের জন্য আরো একটি সুখবর দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, ব্যাংক ঋণের সুদ চক্রবৃদ্ধি হারে হিসাব ও ধার্য করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা শিগগিরই সরল সুদ হিসাবে চলে যাব। চক্রবৃদ্ধি পদ্ধতি এখন পৃথিবীর কোথাও কার্যকর নেই।

সোমবার (১৮ মার্চ) বিকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ মিলনায়তনে দেশের সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের নিয়ে মতবিনিময় করেন মন্ত্রী।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় তিন ঘণ্টার রুদ্ধধার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মুস্তফা কামাল।

এ সময় তিনি আবারো হুশিয়ারি করে বলেছেন, আমি সততায় বিশ্বাস করি। অসাধু ব্যবসায়ীদের কোনো ছাড় নয়। ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতেই হবে। সরকার ব্যবসায়ীদের জন্য যা যা করা দরকার সব করবে। কারণ অর্থনীতিকে সচল রেখে বেসরকারি খাত কর্মসংস্থান তৈরি করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের আর্থিক খাতে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে। এটা দীর্ঘদিনের। নতুন করে আসেনি। এমন নয় গত ৫-৭ বছরে হয়েছে। তবে এখন আমাদের এগুলো ঠিক করতে হবে। এখন ঠিক করার সময় এসেছে। হাত দিতে হবে।

তিনি বলেন, শিগগিরই সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে বিশেষ নিরীক্ষা করা হবে। কারণ আমরা অবশ্যই জানতে চাই আমাদের আর্থিক চিত্র। কারো জেল জরিমানা করার জন্য নয়। এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারব কারা ভালো ব্যবসায়ী কারা খারাপ ব্যবসায়ী। ভালো ব্যবসায়ীদের সামর্থ্য মোতাবেক সাহায্য করা হবে।

মুস্তফা কামাল বলেন, কিছু কিছু ব্যত্যয় আছে। আমরা যখন সুদহার হিসাব করি তখন চক্রবৃদ্ধি হার ধরা হয়। সরল সুদ কীভাবে করা যায় সেটি বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রত্যেক ব্যবসায়ী ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করেন। আমাদের প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ব্যাংক যদি খারাপ হবে কীভাবে এটি হচ্ছে। ব্যাংক সম্পর্কে যা শুনছেন তা সঠিক নয়। কিছু সনাতন হিসাবের কারণে। কিছু ত্রুটির কারণে।

তিনি বলেন, বিদ্যমান ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। কোনো একটি কোম্পানির কারণে অন্যটির সুযোগ বন্ধ করা যাবে না। একজন  পরিচালকের কারণে সব ব্যবসা বন্ধ করা যাবে না। একজন ব্যক্তির ৫টি কোম্পানি আছে। একটি খারাপ হতে পারে। তাই বলে, অন্য ৪টি বন্ধ করা যাবে না।

কামাল বলেন, আমাদের নন সলভেন্সি আইন নেই। অ্যাসেট ম্যাজেনমেন্ট কোম্পানি নেই। এগুলো আমাদের করতে হবে। তা না হলে আমাদের কোনো বিপদ হলে উপায় নেই। বিশ্বাসের জায়গায় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এটি যাতে আবার ফিরে আসে সেই চেষ্টা করা হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বন্ড মার্কেট সচল করা হবে। এই বছরের মধ্যেই এর দৃশ্যমান উন্নতি হবে। ব্যাংক খাতে বড় সমস্যা স্বল্পমেয়াদি আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করা। বন্ড মার্কেট সচল করে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করা হবে। আগামী বছর থেকে বন্ড ছাড়া হবে। শক্তিশালী অর্থনীতি যেভাবে চলে সেভাবে চলবে আমাদের অর্থনীতি।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি ব্যাংক ও বীমা ব্যর্থ হয় না। কারণ এগুলো চাহিদার তুলনায় কম। আমি আবারো বলব, ব্যাংকের সংখ্যা দিয়ে বিবেচনা করা যাবে না। বিদেশের অনেক ব্যাংকের শাখার যে সম্পদ আমাদের বেসরকারি ব্যাংকের সব মিলিয়ে সেই সম্পদ নেই। ১৮ কোটি মানুষের জন্য ৬২টি ব্যাংক যথেষ্ট নয়।

ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ যারা ব্যাংকিং বুঝেন তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কারো চাকরি নেই এমন ব্যক্তি হলেই আর পরিচালক নয়। যারা হিসাব আইন বুঝেন, তাদের পরিচালক করা হবে। এ ব্যাপারে কোনো সুপারিশ করবেন না কেউ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি ব্যাংক খাতের রেগুলেটর হিসেবে কাজ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ দ্বৈতশাসন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, সবকিছুর অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী। একজন অভিভাবক। আমরা সবাই প্রধানমন্ত্রীর জন্য কাজ করব।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ঋণ পুনঃতফসিল করার বিষয় আরো কীভাবে সহজ করা যায় সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ব্যাংকের পরিচালকদের জবাবদিহিতার বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। সুশাসন প্রশ্নে কোনো আপস না করতে বলা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই