তনু হত্যা

ডিএনএ টেস্ট : খুনিরা ধরা পড়বেই

  • সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২০, ২০১৬, ০৪:০৫ পিএম

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছিল। ডিএনএ পরীক্ষায় তনুর কাপড়ে ধর্ষণের আলামত মিলেছে। তার মৃতদেহে মোট ৪ জনের ডিএনএ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি তনুর নিজের রক্তের। অন্য তিনটি তিন পুরুষের। ধর্ষণের আলামত পরীক্ষা করে কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর শরীরে পাওয়া নমুনা মিলিয়ে দেখতে দুই সেনা সদস্যসহ সন্দেহভাজনদের ডিএনএ সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। তারা সন্দেহভাজন কয়েকজনের তালিকা করে নমুনা সংগ্রহের কাজে হাত দিয়েছেন। পরে তনুর শরীর থেকে পাওয়া নমুনার সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখা হবে।

গত ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসে তনুর লাশ পাওয়ার পর থানা পুলিশ ও ডিবির হাত ঘুরে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া সিআইডি কয়েক দফায় ঘটনাস্থলে গিয়ে আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসে। সিআইডি জানায়, তনুর মা আনোয়ারা বেগম সন্দেহভাজন হিসেবে যাদের নাম বলেছিলেন, সন্দেহভাজনদের তালিকায় তারাও রয়েছেন। এর আগে, তনুর ক্ষুব্ধ মা সাংবাদিকদের বলেন, কুমিল্লা সেনানিবাসের সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহী জাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। তনু হত্যাকান্ডের পর পুলিশ ধর্ষণের সন্দেহের কথা জানালেও ১৫ দিন পর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক দল ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে সেই ধরনের আলামত না পাওয়ার কথা জানিয়েছিল। এরপর আদালতের আদেশে কবর থেকে লাশ তুলে তনুর দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত হয়। সেনানিবাসের এই হত্যাকান্ড ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে; যদিও সেনাবাহিনী থেকে তদন্তে সব ধরনের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, তনুর কাপড়, অন্তর্বাস, ভেজাইন্যাল সোয়াব, শরীরের অংশবিশেষ ও রক্তের ডিএনএতে ৩ ব্যক্তির স্পার্ম পাওয়া যায়। অন্তর্বাসে যে রক্ত মিলেছে তা-ও তনুর বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ঢাকায় সিআইডির পরীক্ষাগারে ডিএনএ পরীক্ষার পর এই আলামত মিলেছে। সিআইডি কুমিল্লার বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান বলেন, আমরা ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিশ্চিত হয়েছি, তনু ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। বেশ কিছু তথ্য, উপাত্ত, মুঠোফোনের এসএমএস ও জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে আমরা আসামি শনাক্ত করতে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। নাজমুল করিম খান আরও বলেন, ধর্ষণের আলামত নিশ্চিত হতে আমরা ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছিলাম। ভেজাইনাল সোয়াব (ফ্লুইড) নমুনা হিসেবে আমাদের পরীক্ষাগারে পাঠানোর জন্য তাদের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছিলাম। তারা আমাদের জানান, পরীক্ষায় তারা আলামত পাননি। তাই নমুনা সংরক্ষণ করা হয়নি। এরপর আমরা আদালতের অনুমতি নিয়ে তনুর মৃতদেহে থাকা কাপড়-চোপড় ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সিআইডির পরীক্ষাগারে পাঠাই। তিনি জানান, এ ডিএনএ প্রতিবেদন আদালতে পাঠানো হয়েছে। এখন যত দ্রুত দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে, ততই এ মামলার অগ্রগতি দেশবাসীকে দেখানো যাবে বলে আশা করছে সিআইডি। গত ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকার একটি ঝোপে সোহাগী জাহান তনুর মৃতদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে পুলিশ, তারপর ডিবি তদন্ত করে। সর্বশেষ এখন সিআইডি তদন্ত করছে।

গত ২৮ মার্চ ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য তনুর মৃতদেহের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করে ডিবির জেলা শাখা। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৩০ মার্চ তনুর মৃতদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর ৪ এপ্রিল কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ থেকে প্রথম ময়নাতদন্ত প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে তনুকে হত্যা এবং ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়। তনু হত্যাকান্ডের পর পুলিশ ধর্ষণের সন্দেহের কথা জানালেও ১৫ দিন পর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক দল ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে সেই ধরনের আলামত না পাওয়ার কথা জানিয়েছিল। তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে, প্রথমবার ময়না তদন্তে কেন ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেলনা তা পরিস্কার হওয়া দরকার। সে সময় কি কি ভুল হযেছিল, অথবা স্বেচ্ছায় বা কারো গাফিলতিতে তখন ধর্ষণের আলামত মিললো না তাও পবিস্কার হওয়া দরকার।

সোনালীনিউজ/ঢাকা