প্রিয় লেখকবরেষু...

  • সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২০, ২০১৬, ০৪:৩৬ পিএম

পেশা এবং শখ সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। পেশার সঙ্গে জীবিকার প্রশ্ন জড়িত। কিন্তু শখের সাথে জড়িত শিল্প ও রুচি বোধ। পেশার সাথে যে শিল্প কিংবা রুচি জড়িত নয়, সে কথা জোরালোভাবে বলা যায় না। তবে এখানে নিজের পছন্দ-অপছন্দের চেয়ে অন্যের মনোরঞ্জনকে বেশি প্রাধান্য দিতে হয়। তাই শিল্পীর শিল্পকর্ম এবং রুচি এখানে মুখ্যের বদলে গৌণের ভূমিকা পালন করে।

যারা টুকিটাকি লেখালেখি করেন তাদের অধিকাংশই শখের লেখক। লেখালেখিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা চ্যালেঞ্জিং এবং কঠিন দায়িত্বের বিষয়। সেখানে যেমন জবাবদিহিতা থাকে তেমনি রুজি-রোজগারের প্রশ্নও ঘোরাঘুরি করে। তাই শখের লেখক হওয়ার চেয়ে পেশাদার লেখক হওয়া অনেক কঠিন।
 
লেখালেখিকে যারা শখের চর্চায় রাখতে চান তাদের বোধহয় লেখার বিনিময়ে অর্থ চাওয়ার কিংবা পাওয়ার মানসিকতা দেখানো উচিত নয়। কেননা কোনও কাজের বিনিময় গ্রহন করলে সেখানে স্রষ্টার স্বাতন্ত্র্যবোধ জিইয়ে রাখা যায় না। অর্থের বিনিময় ঘটলেই নিজের ভাবনার চেয়ে অপরের অর্থ এবং ইচ্ছার মূল্য দিতে হয় বেশি। শখে যে সকল কাজ করা হয় সেখানে থাকে স্র্রষ্টার একক প্রভুত্ব বজায় থাকে। সৃষ্টি হয় শিল্পের সুর, যা লাভ করে চিরায়তের মর্যাদা। এটা মানুষের মনোরঞ্জন করে স্বার্থহীনভাবে।

একজন শখের লেখক যদি অপরের খুশিতে কিংবা অন্য কোনওভাবে অর্থ বা বিনিময় গ্রহন করেন, তবে পরবর্তী লেখা থেকে লেখকের চিন্তার চেয়ে ভোক্তার খুশিকে বেশি প্রাধান্য দিতে হয়। যে কারণে শখের লেখকের ইচ্ছাশক্তি মরে যায়, চিন্তাশক্তি হয়ে পড়ে এক পেশে, লেখালেখিতে ভর করে একগোঁয়েমি মানসিকতা। শিল্পের চর্চা হয়ে যায় অনুর্বর। মানুষমাত্রই অর্থের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিন্তু শখের লেখকের অন্তত অর্থের বিনময়ে লেখার প্রবণতা এড়াতে হবে কঠোরভাবে। ব্যক্তি সত্ত্বার স্বকীয় চিন্তনের ক্ষমতার জন্য এটা জরুরিও বটে।

যদি পেশাদার লেখক হোন তবে টাকা নিতে হবে। কারণ এ কাজ আপনার জীবিকা উপার্জনের মাধ্যম। তখন আপনি যদি লাজুকের ভূমিকা নেন কিংবা আড়াল করে রাখেন প্রয়োজনীয়তাকে তবে নিজেকে কষ্টের মধ্য দিয়ে চালিয়ে নিতে হবে। একক জীবনের কষ্ট সহ্য করা সহজ কিন্তু যখন আপনার জীবনের সাথে আরও কতগুলো জীবন জড়িয়ে গেছে। তখন আপনাকে কোন না কোন কর্মে নিজেকে জড়িত করতে হবে। এ অর্থে আপনি লেখালেখিকে পেশা হিসেবে গ্রহন করতে পারেন এবং কাজ হিসেবে এটা সম্মাজনকও বটে। তখন লেখকের সৃষ্টিতে যতটুকু প্রাধান্য পায় শিল্পের চর্চা ঠিক ততটুকুই গুরুত্ব পায় জীবিকা সংগ্রহের ব্যাপারটি।

মুলত এ লেখায় জোর দিয়ে বলা কথাগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে শখের লেখকদের করণীয়-বর্জনীয়। শখের লেখকদের কাছে এটা অনুরোধও বটে। আবারও বলছি, শখের লেখক জীবনে লেখার বিনিময়ে টাকা লেখককে হয়ত উৎসাহ দেবে বটে কিন্তু ভাবনাগুলোকে বদলে দেবে চরমভাবে। পূর্ব চিন্তার সাথে তখন পরবর্তী ভাবনার মিল পাওয়া কষ্টকর হবে। সামর্থ্য থাকলে লেখালেখিকে পেশা হিসেবে গ্রহন না করে শুধু শখ হিসেবে গ্রহন করলে চিরস্মরণীয়, বরণীয় হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

সমাজে আপনি লেখক হিসেবে মোটামুটি পরিচিত হলে, কাছেরজন থেকে প্রতিবেশী পর্যন্ত সবাই জিজ্ঞাসা করবে-লেখালেখি করে টু’পাইস আয় করতে পারো তো? এ প্রশ্নগুলো কোন অবস্থাতেই কঠিনভাবে গ্রহন করা যাবে না। কৌশলী হয়ে তাদের প্রশ্নগুলো যেমন এড়িয়ে যেতে হবে তেমনি তোমার চিত্তকে ভাবনার জন্য সর্বদা উর্বর এবং সতেজ রাখার তপস্যা করতে হবে।

লেখালেখির সাথে টাকা-পয়সার সম্পর্ক কতটুকু তা নির্ধারনের ভার শখের লেখকদের কাঁধেই রইলো, তবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মত যদি বলতে হয়, ‘হে দারিদ্র্য! তুমি মোরে করেছ মহান/তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রিষ্টের সম্মান’-তবে বোধহয় শখের লেখক এবং পেশাদার লেখকের মধ্যে অর্থ গ্রহন এবং উপেক্ষার নীতিটি কঠিনভাবেই মান্য করে লেখক জীবনের প্রতিটি অধ্যায় পাড়ি দিতে হবে।  

সোনালীনিউজ/ঢাকা