আইন ভঙ্গের নির্মম পরিণতি

  • সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০১৬, ০৫:৫০ পিএম

মানুষ হাসপাতালে যায় অসুখ থেকে ভালো হওয়ার জন্য। আর সেই হাসপাতালের সামনেই যদি ঘটে মৃত্যু, তাহলে এর চেয়ে পরিতাপের বিষয় আর কী হতে পারে! তেমনই এক দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেল গত শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ ফটকের সামনে। ‘মানবসেবা’ নামের একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাঁচজন মানুষকে পিষে মারে। আহত হন আরো কয়েকজন। গাড়িচালকরা আইন ও বিধিবিধান ভঙ্গ করতে করতে যে নিষ্ঠুর দানবে পরিণত হয়েছে, তারই মর্মান্তিক উদাহরণ এ দুর্ঘটনা। যাদের দৌরাত্ম্য থেকে জনাকীর্ণ হাসপাতাল ফটকেও মানুষ নিরাপদ নয়। নিষ্ঠুর এই পরিণতি মেনে নেয়া বড়ই কঠিন।

তথাকথিত অ্যাম্বুলেন্স সেবার নামে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় নানা সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেটের কাছে হাসপাতালে সেবা নিতে যাওয়া রোগী ও তাদের স্বজনরা জিম্মি। রোগীদের জিম্মি করে দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক ব্যবসা করে গেলেও কর্তৃৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। কারণ হাসপাতালে কর্মরতদের একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী এসব সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। গত শনিবার যে অ্যাম্বুলেন্সটি এ দুর্ঘটনা ঘটায়, সেটির মালিকও এই হাসপাতালেরই এক কর্মী। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোয় রোগী আনা-নেয়ার জন্য যত অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন, তার তুলনায় আছে অনেক কম। এসব অ্যাম্বুলেন্সের অধিকাংশই নষ্ট থাকে বা নষ্ট করে রাখা হয়। আর এ সুযোগটি নেয় অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। প্রতিটি হাসপাতাল ঘিরে গড়ে ওঠা এসব সিন্ডিকেটের বাইরে কোনো অ্যাম্বুলেন্সে রোগী আনা-নেয়া করা যায় না। বাধ্য হয়েই তাদের অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হয়। বিশেষ করে হাসপাতালে কোনো রোগী মারা গেলে এই সিন্ডিকেটের বাইরে গিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করার কোনো সুযোগ নেই। বাইরের কোনো গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালে ঢুকতে দেয়া হয় না। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অবগত হওয়া সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নেয় না। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের বাধ্য হয়েই এই সিন্ডিকেটের কাছে মাথা নোয়াতে হয়। সরকারি হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা বাড়ানো না হলে এই বাণিজ্য বন্ধ করা যাবে না। সেবার নামে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যে নির্দয় ও অনৈতিক বাণিজ্য চলছে, তা বন্ধ করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি হাসপাতালের যেসব কর্মচারী এ অনৈতিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

হাসপাতাল চত্বরে সৃষ্ট কোনো ঘটনার দায় কর্তৃৃপক্ষ এড়াতে পারে না। কারণ এই মর্মান্তিক ঘটনাটির নেপথ্যেও অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতদের আত্মীয়স্বজনরা দাবি করেছেন, চালকের এক সহকারী অ্যাম্বুলেন্সটি চালানোর কারণেই এ নির্মম ঘটনাটি ঘটেছে। মনে রাখতে হবে, এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা শুধু নির্মম নিয়তিকে সামনে টেনে এনেছে তা নয়, বরং সরকারের সেবাব্যবস্থাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমরা আশা করি, এই প্রাণহানির ঘটনার উপযুক্ত বিচার হবে। একই সঙ্গে এমন জরুরি সেবা নিয়ে যারা অনৈতিক বাণিজ্য করছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা