পূজায় তাহারা

  • বিনোদন প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০১৯, ০৯:১৫ পিএম

ঢাকা : বছর ঘুরে নতুন সাজে আবারো এলো দুর্গাপূজা। এবারের পূজা উদযাপন নিয়ে তারকাদের আছে ভিন্ন পরিকল্পনা। তারকারা নিজেদের মতো করেই কাটাবেন এবারের  পূজা।

অপর্ণা ঘোষ : বরাবরের মতো এবারো পরিবারের সঙ্গে চট্টগ্রামে পূজা উদযাপন করবেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষ। অপর্ণা জানান, তার জীবনের প্রায় দুর্গা পূজাগুলোয় কাটিয়েছেন চট্টগ্রামে। সেখানে রয়েছে তার অনেক স্মৃতি। পূজার সময়ে শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিগুলো তাকে উৎফুল্ল করে তোলে।

অপর্ণা বলেন, ‘পূজা শুরু হওয়ার আগে, পূজা আসছে এটা ভাবতে আরো বেশি ভালো লাগত। তর সইত না। আমাদের পূজার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যেত এক মাস আগে থেকেই। বাবার সঙ্গে দোকানে গিয়ে পোশাক কেনা আর আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে পোশাক উপহার পাওয়া এক ধরনের আনন্দের বিষয় ছিল। কাপড় কিনতে বাজারে গিয়ে সবচেয়ে বেশি বিপত্তি হতো ছোট বোনের সঙ্গে। কারণ আমি যে পোশাক পছন্দ করতাম ও সেটার জন্য বায়না ধরত। আজও সেই ঘটনাগুলো মনে পড়ে। পূজা না আসা পর্যন্ত আরেকটা চল ছিল সব বন্ধুর মধ্যে। আমরা কেউই পূজা শুরু না হওয়া পর্যন্ত নতুন জামা ও জুতা কেউ কাউকে দেখাতাম না। সবই লুকিয়ে রাখতাম। আর পূজার পাঁচ দিন ধরে চলত কার পোশাক কেমন, কোন মণ্ডপের প্রতিমা কত সুন্দর, তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা। আর সারা দিন একসঙ্গে দলবেঁধে বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজনের বাসায় ঘুরে বেড়ানো তো ছিলই। দুর্গাপূজায় প্রতিমা বিসর্জনের এমন পরিবেশ বাংলাদেশের আর কোথাও হয় না।’

অরুণা বিশ্বাস : অরুণা বিশ্বাস বলেন, ‘দুর্গাপূজা এলে হোস্টেল থেকে আমরা কয়েকজন মিলে বিভিন্ন মণ্ডপে যেতাম। শিক্ষকরাই নিয়ে যেতেন স্কুলের পাশের বিরাট একটি জায়গায় যেখানে পূজা হতো। গ্রামের অন্যান্য মানুষ দূর থেকে দেখতেন। আমরা সাজতাম, নাচতাম, পূজা করতাম। কোনো সমস্যা কিংবা ভোগান্তি ছিল না। কিন্তু এখনকার পূজা কিংবা ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো দেখলে পেছনের কথা মনে পড়ে যায়। মনে হয় এটাই একটি গল্প, যে গল্পের প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। এখন ধর্মীয় কোনো অনুষ্ঠান হলে নিরাপত্তা দরকার পড়ে। চারপাশে পুলিশ ও র্যাব থাকে নিরাপত্তার জন্য। কিন্তু আমাদের শৈশবের সময় এমন ছিল না। এখন যারা ছোট তারা কী শিখছে? তারা যখন বড় হবে তাদের কাছে ছোটরা কী শিখবে বা জানতে চাইবে তা ভেবে কষ্ট হয়।’

জ্যোতিকা জ্যোতি : জ্যোতিকা জ্যোতি বলেন, ‘শরৎ এলেই পূজার আমেজ চলে আসে। যখন-তখন আলতা পরতে ইচ্ছে করে। এই উৎসবে আলতা-সিঁদুর আর লালপাড়-সাদা শাড়িতে নিজেকে সাজাতে যেমন ভালো লাগে, তেমনি বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে। পূজার কেনাকাটা অনেক আগেই শেষ করে রেখেছি। কোন দিন, কখন, কী পরব, সে চিন্তাও শেষ।

গতবারের মতো এবারো পূজা করছি কলকাতায়। বিশেষ কারণে আমার পূজার আনন্দ এবার দ্বিগুণ হবে। গত পূজায় ছিল কলকাতার বালিগঞ্জ কালচারাল পূজামণ্ডপে আমার অভিনীত ছবি ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্তে’র টিজার রিলিজ হয়। জীবনে একবারই কলকতায় দুর্গাপূজা উদযাপন করেছিলাম। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো কলকাতায় মামাবাড়িতে পূজা উদযাপন হচ্ছে। আর এই পূজায় আমার ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। এরই মধ্যে অনেকেই ছবিটির প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশের অনেক তারকারাও এখানে এসে আমার ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ দেখছেন।

রোববার অভিনেত্রী জয়া আহসান আপু টিকিট কিনে আমাকে ছবিটি দেখিয়েছেন তিনি। এরপর কবরী আপাও দেখেছেন ছবিটি। বাংলাদেশে যার হাত ধরে আমার পর্দায় অভিষেক, ভারতের অভিষেকেও তাকে পাশে পেলাম। এ কারণে এবারের পূজা নিয়ে একটু বেশিই উচ্ছ্বসিত আমি।’

পূজা চেরি : পূজা চেরি বলেন, ‘ঢাকাতেই আছি এবারের পূজায়। কারণ ঢাকাতেই আমার বেড়ে ওঠা। ধুলোমাখা শৈশবের দিনগুলো ওই মাটিতেই কেটেছে। ছোটবেলায় তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজারসহ পুরান ঢাকার অনেক মন্দিরে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে পূজার আনন্দ ভাগাভাগি করেছি। এখন সেই সময়গুলো খুব মিস করি। শুটিং ডাবিংয়ের ব্যস্ততা না থাকায় এবার বেশ আনন্দ করব। ঢাকায় ঢাকেশ্বরী ও বনানী পূজামণ্ডপ ঘোরার ইচ্ছা রয়েছে। পূজা শুরু হওয়ার আগেই আমাদের বাসায় উৎসবের আমেজ তৈরি হতো। বাড়ির উঠানে বসে সবাই নাড়ু, মোয়াসহ নানা ধরনের খাবার তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে যেত। বাবা আগে থেকেই খাবারের লিস্ট করে রাখত। পূজায় নতুন জামাকাপড় আমার চাই-ই চাই। এবারো অনেক পোশাক কিনেছি। প্রতিবারের মতো উচ্ছ্বাস-উল্লাসেই কাটবে মনে হচ্ছে।’

ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর : পূজা নিয়ে ঊর্মিলা বলেন, ‘এবারো আহামরি কোনো পরিকল্পনা নেই। গতানুগতিক ধারাতেই দুর্গা উৎসব কাটাতে হচ্ছে। এর আগেও বলেছি, ধর্মীয় অনুষ্ঠান সবার কাছে পরম পবিত্র এবং আনন্দের। আমার কাছেও খুব আনন্দের একটি উৎসব ছিল দুর্গাপূজা। কিন্তু তিন বছর হলো এ উৎসব আমার কাছে ট্র্যাজেডির মতো। এ ট্র্যাজেডির কথা আমি সারা জীবন মনে রাখব। কেননা, এ উৎসবে দশমীর দিনে আমার বাবা অসুস্থ হন। তার পাঁচ দিন পরই তিনি চলে যান আমাদের ছেড়ে। তিন বছর হলো বাবাকে ছাড়া পূজায় যাই, কিন্তু আনন্দ পাই না। কারণ সব আনন্দ মাটি হয়ে গেছে বাবা চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। এ উৎসব ঘিরে আর কখনো আনন্দ হবে না। দুর্গাপূজা এখন আমার কাছে খুব কষ্টের আর কান্নার। তবুও পূজা যেহেতু আমাদের ধর্মীয় সবচেয়ে বড় উৎসব, তাই কিছু আচার-আচরণেও অবশ্যই অংশ নেব। নিতে হবে। কিন্তু সব কিছুতেই বাবার শূন্যতা আমাকে খুব কষ্ট দেবে। বাবাকে যেন ঈশ্বর স্বর্গদান করেন, এই কামনা করি।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই