করোনায় বিশ্বে এখন ‘সুইডেন মডেল’

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০২০, ১০:১৮ এএম

ঢাকা : করোনা মহামারী মোকাবেলায় সারা বিশ্বই এখন ‘সুইডেন মডেল’ অনুসরণ করছে। হয়তো বাধ্য হয়েই। হয়তো আর উপায় নেই বলেই। ভেবে চিন্তে কিংবা স্রোতে গা ভাসিয়ে-সব দেশেই এখন ‘সুইডেন মডেল’।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা বিশ্ব মোড়লদের কেউ মুখ ফুটে না বললেও সুইডিশ এপিডেমিওলজিস্ট জোহান কার্লসনের লকডাউনবিরোধী হার্ড ইমিউনিটি (গণ রোগ প্রতিরোধক্ষমতা) তত্ত্বেই ফিরে আসছে সব দেশ। লকডাউন শিথিল করছে।

সৈকত-শপিং মল চালু করছে। গার্মেন্ট-কলকারখানা খুলে দিচ্ছে। মানুষকে কাজে ফেরাচ্ছে। এক কথায় ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরছে গোটা বিশ্ব। অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে এর বিকল্প নেই। ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচার দ্বিতীয় আর একটি পথও নেই।

সুইডেনই বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে একদিনের জন্যও লকডাউন হয়নি। ভেঙে পড়েনি অর্থনীতি। বরং জনগণের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে নজর দিয়ে অনেকাংশেই সফল দেশটি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও, জীবনযাত্রা একেবারে স্তব্ধ করে দেয়নি।

সুইডেনের পথেই ইতোমধ্যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে ব্রিটেন, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন ও জার্মানি। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্যও লকডাউন শিথিল করেছে। দেখাদেখি লকডাউন শিথিল করে হোটেল-রেস্তোরাঁ ও শপিং মল খুলে দিয়েছে সৌদি আরব ও আরব আমিরাত।

শিগগির মক্কা-মদিনার পবিত্র দুই মসজিদসহ খুলে দেয়া হবে দেশটির অফিস-আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও। ধাপে ধাপে কাজে ফিরছে বাংলাদেশও। ভারত-পাকিস্তানেও কলকারখানা চালু হয়েছে আরও আগে। আগামী সপ্তাহেই লকডাউন তুলে নিতে যাচ্ছে ইতালি, পোল্যান্ড ও গ্রিস। শিগগির করোনা অচলাবস্থা দূর করার কথা বিবেচনা করছে আরও অনেক দেশ।

বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা করোনা নিয়ে মতামতের ভিত্তিতে দুটি দলে বিভক্ত হয়েছে। এক গ্রুপ বলছে, লকডাউন প্রয়োজনীয়। অন্য দল বলছে, মানুষকে বন্দিদশা থেকে মুক্তি দাও। করোনাকে নির্মূল করার একমাত্র পথ এটাই। বাড়িতে থাকলে পুরো বিশ্বের অর্থনীতি তলানিতে গিয়ে ঠেকবে।

সুতরাং এর থেকে লুকিয়ে থাকার চেয়ে মুখোমুখি হও। এতে লোকেরা যত বেশি সংক্রমিত হবে, মানবদেহ এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার জন্য এটি আরও শক্তি তৈরি করবে। এটাকেই বলে হার্ড ইমিউনিটি। অনেক বিজ্ঞানী বিশ্বকে করোনাভাইরাস এড়াতে এই হার্ড ইমিউনিটি গ্রহণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন। মহামারী প্রতিরোধের এই হাজার বছরের প্রাচীন কৌশল অনুসরণ করে সুইডেন সরকার।

চলতি সপ্তাহেই দেশটির চিফ এপিডেমিওলজিস্ট বলেন, সুইডেনে ইতোমধ্যে অনেকটাই হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে রাজধানী স্টকহোমে ‘গণ রোগ প্রতিরোধক্ষমতা’ তৈরি হবে। প্রতিবেশী দেশগুলো যখন তাদের সীমানা, স্কুল, বার, রেস্তোরাঁ এবং কারখানাগুলো বন্ধ করে দিয়েছে, সুইডিশ জনস্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান কার্লসন তখন দেশবাসীকে বলেন, আপনারা বাইরে বের হোন, স্বাভাবিক কাজকর্ম করেন, বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণ করুন। এটা শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

করোনাবিরোধী লড়াইয়ে সুইডেনের দেখানো পথেই এখন হাঁটছে বিশ্বের বহু দেশ। বুধবার থেকে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে। শিগগির মক্কা-মদিনার পবিত্র দুই মসজিদ খোলা হবে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। ৪ মে হোটেল-শপিং মল খুলে দিচ্ছে পোল্যান্ড ও ইতালি।

আগামী সপ্তাহ থেকে লকডাউন প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছে গ্রিস। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্যেও লকডাউন তুলে নেয়া হয়েছে। স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং, নেপাল, ভুটান, চীনসহ আরও কয়েকটি দেশ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই