বিজেপি জোটের এমপির ‘যৌন নিপীড়নের’ হাজারো ভিডিও ফাঁস

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০২৪, ০৮:১১ পিএম

ঢাকা : ভারতে চলছে লোকসভা নির্বাচনে ভোট গ্রহণ। এর মধ্যেই কর্নাটকে লোকসভার একটি আসনের এমপি প্রাজ্বল রেভান্নার হাজারো ভিডিও অনলাইনে ফাঁস হয়েছে। যেখানে তাকে বেশ কয়েকজন নারীকে যৌন নিপীড়ন করতে দেখা যাচ্ছে।

ভিডিওগুলো ফাঁস হওয়ার পর ভারতজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। পুলিশ ওইসব ভিডিওগুলোর সত্যতা যাচাই করে দেখছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এ বিষয়ে প্রাজ্বল রেভান্না কোনো মন্তব্য এখন পর্যন্ত করেননি। তবে তার কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ওই ভিডিও গুলো ভুয়া। প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেগুলো তৈরি করা হয়েছে।

প্রাজ্বল কর্নাটকের জনতা দলের (সেক্যুলার) নেতা। দলটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের সদস্য। জনতা দল (সেক্যুলার)-জেডি(এস) এর প্রতিষ্ঠাতা ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেব গৌড়া। প্রাজ্বল তার নাতি।

[222411]

প্রাজ্বলের বাবা এইচডি রেভোন্না কর্নাটকের বিধানসভার সদস্য। তার বিরুদ্ধেও যৌন নিপীড়নের অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। মামলাটি করেছেন ওই পরিবারে কাজ করা একজন সাবেক নারী কর্মী।

প্রাজ্বলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর সোমবার জেডি(এস) থেকে তাদের বরখাস্ত করা হচ্ছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।

কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী কে সিদ্ধারামাইয়াহ বলেন, রাজ্যের নারী বিষয়ক কমিশন থেকে অনুরোধের ভিত্তিতে প্রাজ্বলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হবে।  

গত ২৬ এপ্রিল প্রাজ্বলের আসন হাসানে লোকসভা নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এবারও এ আসনে ভোটের লড়াইয়ে আছেন প্রাজ্বল। ভোটের একদিন পর ‘যৌন নিপীড়নের’ ভিডিওগুলো ফাঁস হয়। কে ভিডিওগুলো ফাঁস করেছে তা পরিষ্কার নয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

ভারতের পত্রিকা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এর বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, ভোটের আগে দুই হাজারের বেশি পেন ড্রাইভ বিতরণ করা হয়েছে।

যে ভিডিওগুলো ফাঁস হয়েছে সেগুলো প্রাজ্বল নিজেই ধারণ করছেন বলেও খবর প্রকাশ পেয়েছে। ভিডিওতে ওইসব নারীদের মুখ দেখা যাচ্ছে যাদের তিনি যৌন নিপীড়ন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

একজন কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, পেন ড্রাইভগুলো বাস স্ট্যান্ডে থাকা বাসের আসনে ফেলে রাখা হয়েছিল। এছাড়াও পার্কের মত জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় লোকজনকে সেগুলো দেওয়া হয়।

পেন ড্রাইভগুলোতে দুই হাজারের বেশি ফাইল রয়েছে। যেগুলোতে ভিডিও ও ছবি আছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেগুলো হোয়াটস অ্যাপে ভাইরাল হয়ে যায়।

[222396]

ভিডিওগুলো ছড়িয়ে পড়ার পর কর্নাটকের উইমেন্স কমিশনের প্রধান নাগালাক্সমী চৌধুরি রাজ্য পুলিশ প্রধানের কাছে একটি চিঠি লিখে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান।

নাগালাক্সমী বিবিসিকে বলেন, ভিডিওগুলো দেখলে আপনার রক্তও ক্ষোভে টগবগ করে উঠবে। একটি ভিডিওতে একজন নারীকে ‘দয়া করে করবেন না’, ‘দয়া করে করবেন না’ বলে রীতিমত কাকুতি-মিনতি করতে দেখা যায়। সেগুলো দেখলে যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে।

এদিকে, এই ভিডিওগুলো ছড়িয়ে পড়ার পর গত রোববার ৪৭ বছর বয়সী এক নারী প্রাজ্বল ও তার বাবার বিরুদ্ধে  যৌন নিপীড়নের অভিযোগ নিয়ে থানায় যান। ওই নারী নিজেকে প্রাজ্বলের মায়ের কাজিন বলে দাবি করেন। বলেন, তিনি ওই পরিবারে রান্নার কাজ করতেন।

ওই নারী অভিযোগ পত্রে লেখেন, যখন আমি কাজে যোগ দেই তখন আরও ছয়জন গৃহকর্মী আমাকে বলেছিল, তারা প্রাজ্বলকে ভয় পায়। পুরুষ গৃহকর্মীরাও যে দলে ছিল। তারা আমাকে এইচডি রেভান্না এবং তার ছেলে প্রাজ্বলের থেকে সাবধান থাকতে বলেছিল।

যখন ওর স্ত্রী বাইরে কোথাও যেতেন, এইচডি রেভান্না আমার শরীরে বার বার অশালীনভাবে হাত দিতেন। আমার পোশাক টেনে খুলে আমাকে যৌন নিপীড়ন করতেন। আমি যখন রান্নাঘরে কাজ করতাম তখন পেছন থেকে প্রাজ্বল আমাকে জড়িয়ে ধরতো।

এতদিন কেনো অভিযোগ করেননি তার ব্যাখ্যায় এই নারী বলেন, অনলাইনে ভাইরাল ভিডিওগুলো তিনিও দেখেছেন এবং সেগুলো দেখে তিনি সামনে এগিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন।

তিনি প্রাজ্বলের বিরুদ্ধে তার মেয়েকে শারীরিক নিপীড়ন করার অভিযোগও করেছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রাজ্বল ভারত ছেড়ে চলে গেছেন। কোথাও কোথাও খবর হয়েছে, বর্তমানে তিনি জার্মানিতে আছেন। তবে তার বাবা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তারা তদন্ত মোকাবেলা করতে রাজি আছেন।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমরা ভয়ে পালিয়ে যাব না। আমরা এখানেই আছি এবং আইনানুযায়ী এসব অভিযোগের জবাব দেব।

[222395]

ভিডিও ফাঁসের এই ঘটনা কর্নাটকের রাজনীতিতে তোলপাড় তুলেছে। অনেকেই বলছেন, ‘এইরকম জঘন্য কাণ্ডের অভিযোগ যার বিরুদ্ধে তিনি কীভাবে দেশ ছাড়ার অনুমতি পান’।

একজন স্টেট মন্ত্রী এক্স এ এক পোস্টে লেখেন, ‘শত শত নারী যার যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন’ তেমন একজনকে কিভাবে এনডিএ জোট থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তার জবাব মোদীকে দিতে হবে।

দ্য হিন্দু পত্রিকার খবরে বলা হয়, বিজেপির একজন নেতা গত বছরই এইসব ভিডিও ক্লিপের বিষয়ে রাজ্যের নেতাদের অবহিত করেছিলেন।

প্রাজ্বলের বিষয়ে বিজেপির একজন মুখপাত্র এনডিটিভিকে বলেন, দল হিসেবে আমাদের ওই সব ভিডিও নিয়ে কিছু করার নেই এবং এ বিষয়ে তদন্ত নিয়েও কিছু বলার নেই।

জেডি(এস) থেকেও প্রাজ্বল ও তার বাবার সঙ্গে দূরত্বের কথাই বলা হয়েছে। এইচডি রেভান্নার ভাই কর্নাটকের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এইচডি কুমারাস্বামী সোমবার বাবা-ছেলের কাণ্ডকে ‘সমাজের জন্য লজ্জার’ বলে মন্তব্য করেছেন।

বলেন, আমাদের পরিবারকে দোষী বলবেন না। এইচডি রেভান্না ও তার পরিবার আলাদা থাকে। আমি তাদের কর্মকাণ্ডের খবর রাখি না।

যদি প্রাজ্বল ও এইচডি রেভান্না দোষীসাব্যস্ত হন তবে তাদের বিরুদ্ধে দল থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতা জিটি দেব গৌড়া।

এমটিআই