হতে যাচ্ছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি, ব্যক্তিজীবনে বিপর্যয় বার বার

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২২, ০৩:৫৯ পিএম

ঢাকা: প্রথম জীবনে শিক্ষিকা থেকে মন্ত্রী। পরবর্তী কালে রাজ্যপাল। বর্তমানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএ জোটের প্রার্থী। মঙ্গলবার বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা দ্রৌপদী মুর্মুর নাম ঘোষণা করেন।

ওড়িশার ৬৪ বছর বয়সী সাবেক এ শিক্ষক বিজেপির সঙ্গে যুক্ত কয়েক দশক ধরে। দায়িত্ব পালন করেছেন ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গভর্নর হিসেবেও।

ভারতে আগামী ১৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন।রাজনৈতিক পরিস্থিতির গুরুতর কোনও পরিবর্তন না ঘটলে ১৮টি বিরোধী দলের জোটের প্রার্থী যশবন্ত সিনহাকে হারিয়ে দ্রৌপদীর রাইসিনা হিল যাত্রা নিশ্চিত।

‘মহাভারতের দ্রৌপদী’ যেমন পুত্রশোকে আত্মহারা হয়ে পড়েছিলেন, এই দ্রৌপদীও তার দুই পুত্রকে হারিয়েছেন, তা-ও তিন বছরের ব্যবধানে।

শুধু মাত্র তার পুত্রদের নয়, নিজের স্বামীকেও হারিয়েছেন তিনি। শ্যামচরণ মুর্মুর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন দ্রৌপদী। মুর্মু দম্পতির পরিবারে দুই পুত্র ও কন্যা বড় হয়ে উঠছিল। কিন্তু হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন শ্যামচরণ।

এর পর দ্রৌপদীর ব্যক্তিগত জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়ে। ২০০৯ সালের ঘটনা। তার পুত্র লক্ষ্মণ তখন মায়ের সঙ্গে রায়রংপুরে ছিলেন না। সেই সময় পত্রপড় এলাকায় তার কাকার বাড়িতে থাকছিলেন দ্রৌপদী-পুত্র।

হঠাৎ এক দিন সকালবেলায় বিছানা থেকে জ্ঞানহীন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় লক্ষ্মণকে। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে নিকটবর্তী বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে ভুবনেশ্বরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

পুলিশ তদন্তের দাবি, লক্ষ্মণ আগের রাতে তার বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে একটি রেস্তরাঁয় নৈশভোজনে গিয়েছিলেন। পরে তার বন্ধুরাই অটোরিকশায় তাকে কাকার বাড়িতে পৌঁছে দেন। বাড়ি ফিরে তিনি খুব একটা সুস্থ বোধ করছিলেন না।

ক্লান্ত রয়েছেন ভেবে আর তার সঙ্গে কেউ কথা বলেননি। পরের দিন সকালেই তাকে জ্ঞানহীন অবস্থায় পাওয়া যায়। পুলিশের ধারণা, বাড়ি ফেরার সময় লক্ষ্মণের মাথায় আঘাত লাগে। কিন্তু ময়নাতদন্তের সময় কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি।

পুলিশি তদন্তও করা হয়েছে বহু বার। কারও মতে, লক্ষ্ণণ সেই রাতে বাইক চালিয়ে ফিরছিলেন। রাস্তাতেই বাইক থেকে পড়ে গিয়ে চোট পান তিনি। অনেকে বলেন, অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণেই মৃত্যু হয়েছে লক্ষ্মণের। তবে ঠিক কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছিল তা আজও রহস্য।

পুত্রশোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আরও এক বার ধাক্কা আসে দ্রৌপদীর জীবনে। লক্ষ্মণের মারা যাওয়ার তিন বছর পর তার দ্বিতীয় পুত্রকে পথ দুর্ঘটনায় হারান তিনি।

দ্রৌপদীর এক মাত্র কন্যা ইতিশ্রী মুর্মু পেশায় এক ব্যাঙ্ককর্মী। তিনি গণেশ হেমব্রম নামে এক রাগবি খেলোয়াড়কে বিয়ে করেন। তাদের এক কন্যাও রয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবনে এত ঝড় সামলে বর্তমানে দ্রৌপদীর গন্তব্য রাইসিনা হিল। বিরোধী প্রার্থী যশবন্ত সিনহাকে হারিয়ে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হলে দ্রৌপদীই হবেন দেশের দ্বিতীয় মহিলা রাষ্ট্রপতি এবং প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতি। 

২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মতো বড় পরিসরে আলোচনায় আসেন দ্রৌপদী। সে সময় সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে তার নামও রয়েছে বলে গুঞ্জন ওঠে। দ্রৌপদী তখন ঝাড়খণ্ডের গভর্নরের দায়িত্বে।

ওড়িশার ময়ূরভাঁজ জেলার বায়দাপোসি গ্রামে ১৯৫৮ সালের ২০ জুন জন্ম দ্রৌপদীর। গ্রাম পঞ্চায়েতপ্রধানের এ মেয়ে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে পড়াশোনা করেন রাজ্যের রাজধানী ভুবনেশ্বরের রমাদেবী উইমেন’স কলেজে।

ওড়িশা সরকারের করণিক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন দ্রৌপদী মুর্মু। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ মেয়াদে তিনি রাজ্যের সেচ ও জ্বালানি বিভাগে জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ওড়িশার রায়রংপুরের অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে শিক্ষকতা করেন এ রাজনীতিক। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। সে বছর রায়রংপুরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তিনি।

রায়রংপুর আসনে ২০০০ ও ২০০৯ সালে বিজেপির পক্ষে দাঁড়িয়ে ওড়িশা বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন দ্রৌপদী।

২০০০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিজু জনতা দল ও বিজেপির জোট সরকারে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাঁওতাল এ রাজনীতিক। শুরুতে বাণিজ্য ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিলেও পরবর্তী সময়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বভার অর্পণ করা হয় তাকে।

২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তফসিলি সম্প্রদায়ের বিজেপির রাজ্য শাখার সভাপতি ছিলেন দ্রৌপদী মুর্মু। ২০১৫ সালে ওড়িশার পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের প্রথম নারী গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পেয়ে সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে দেন তিনি।

ওড়িশার প্রথম আদিবাসী হিসেবে গভর্নর নিযুক্ত হন দ্রৌপদী। ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত সে পদে ছিলেন তিনি।

ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচিতে কর্মরত বিবিসি হিন্দির রিপোর্টার রবি প্রকাশের মতে, রাজ্যের গভর্নর হিসেবে ব্যাপক সুনাম কুড়ান দ্রৌপদী। তার সময়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য উন্মুক্ত ছিল গভর্নরের কার্যালয়।

সোনালীনিউজ/আইএ