হারলেন ওবামা

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৬, ১০:৪১ পিএম

যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার ঘটনায় সৌদি কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে হতাহতের পরিবাররা চাইলে মামলা করতে পারবে এমন বিলে ওবামার ভেটো খারিজ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস। বিবিসি বলছে, বুধবার কংগ্রেসের উভয় কক্ষে ওবামার ভেটো বিপুল ভোটে পরাজিত হয়।

ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান উভয় দলের সদস্যরা একাট্টা হয়ে বারাক ওবামার অবস্থানের বিপক্ষে ভোট দেন। আট বছরের শাসনামলে এই প্রথম কোনো বিলে ওবামার ভেটো খারিজ হলো। ভেটো খারিজ হওয়ায় বিলটির আইনে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা থাকল না। ১৫ বছর আগে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে (টুইন টাওয়ার) আল-কায়েদা সন্ত্রাসীদের বিমান হামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত ও অন্তত ছয় হাজার আহত হন।

ওই হামলা ও বিমান ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ১৯ জনের মধ্যে ১৫ জনই সৌদি নাগরিক। যে কারণে হামলার পেছনে সৌদি কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ ও বিশ্বের বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন রয়েছে।

সৌদি আরব ৯/১১ হামলায় সন্ত্রাসীদের অর্থায়নসহ কোনো ধরনের সহায়তার কথা অস্বীকার করলেও যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে মধ্যপ্রাচ্যের  এ দেশটির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক তদন্ত প্রতিবেদনে অবশ্য সৌদি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি।

টুইন টাওয়ার হামলায় হতাহত কয়েকজনের পরিবার সৌদি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলেও বিদেশি সরকারের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে আইনি সুরক্ষা থাকায় অনুমতি মেলেনি তাদের। ১৯৭৬ সালে পাস হওয়া ওই আইনে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে সন্ত্রাসী হামলার জন্য বিভিন্ন দেশ ও তার সরকারকে অব্যাহতি দেয়ার বিধান ছিল। নতুন  ‘জাস্টিস এগেইনস্ট স্পন্সরস অব টেররিজম’ (জেএএসটিএ) বিলে আগের আইনকে রহিত করার সুযোগ রাখা হয়েছে।

বিলটি পাসের আগে থেকেই এর বিরুদ্ধে কূটনৈতিক লবিং শুরু করে সৌদি আরব। বিলটি পাস হলে তাদের কাছে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ৭৫০ বিলিয়ন ডলারের বন্ড অন্যদেশের কাছে বিক্রি করে দেয়ার হুমকিও দেয় দেশটি।

সৌদি সরকারের তীব্র আপত্তি ও কূটনৈতিক চাপের মধ্যে চলতি বছরের মে মাসে জেএএসটিএ কংগ্রেসে পাস হয়। পরে তাতে ভেটো (আপত্তি) ক্ষমতা প্রয়োগ করেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। বুধবার প্রেসিডেন্টের ভেটো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দুই কক্ষে ভোট হয়।

উচ্চকক্ষ সিনেটে ওবামার ভেটো ৯৭-১ ভোটে খারিজ হয়। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির হ্যারি রেইডই একমাত্র ভেটোর পক্ষ নেন। হিলারির রানিংমেট টিম কাইন ও ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ভোটদানে বিরত ছিলেন।

প্রসঙ্গত আট বছরের দুই মেয়াদে মোট ১২টি বিলের ওপর ভেটো দিয়েছেন ওবামা। এর মধ্যে এটিই প্রথম খারিজ হলো। সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশও ভেটো দিয়েছিলেন ১২টি বিলে, যার চারটিই কংগ্রেস খারিজ করে দেয়। এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ভেটো দিয়েছিলেন ৩৭ বার। দুবার সেই সিদ্ধান্ত খারিজ হয়ে গিয়েছিল। ক্ষমতায় থাকাকালে জেরাল্ড ফোর্ডের ভেটোও ১২ বার খারিজ হয়েছিল। ১৮৬০ সালের শেষ দিকে প্রেসিডেন্ট হওয়া অ্যান্ডরু জনসন অবশ্য এ তালিকায় প্রথম। তার দেয়া ভেটো মোট ১৫ বার কংগ্রেসে খারিজ হয়। ভেটো খারিজের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া শেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন লেন্ডন জনসন। প্রেসিডেন্টের ভেটো কংগ্রেসে খারিজ হওয়ার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।

ভোটের পর প্রতিক্রিয়ায় সংবাদ সম্মেলনে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জোস আর্নেস্ট বলেছেন, ‘ভেটো খারিজের এই ভোট গেল এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের নেয়া সবচেয়ে বিব্রতকর সিদ্ধান্ত।’ প্রেসিডেন্ট ওবামা একে আইনপ্রণেতাদের ‘ভুল’ বলে অভিহিত করেছেন বলে সিএনএন জানিয়েছে।

পার্লামেন্টে ভোটাভুটির আগে ভেটো দেয়ার পক্ষে যুক্তিতে প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, এ বিল আইনে পরিণত হলে তা যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এমনকি আফগানিস্তান ও ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কর্মকর্তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে পারে।

সিএনএনকে ওবামা বলেন, ‘এটি অবশ্যই একটি বিপজ্জনক নজির। মাঝে মাঝে কেন কঠিন কিছু করতে হয়, এটি তার একটি উদাহরণও। আমার বিশ্বাস কংগ্রেসও এই কঠিন সিদ্ধান্তটিই গ্রহণ করবে।’

‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ৯/১১ হামলায় হতাহতদের পরিবারের মামলা করা নিয়ে দেয়া ভেটো অবশ্যই কঠিন সিদ্ধান্ত, কিন্তু এটিই সঠিক কাজ’, বলেন তিনি। সিআইএর পরিচালক জন ব্রেনান কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত জাতীয় নিরাপত্তায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এ বিলে ক্ষতির সম্ভাব্য পরিমাণ ব্যাপক হতে পারে।’ তবে ভেটোবিরোধীদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে হওয়া সন্ত্রাসী হামলার বিচারে সহায়ক হবে নতুন এ বিল।

‘হোয়াইট হাউস ও নির্বাহী বিভাগ কূটনৈতিক ব্যাপারগুলো নিয়ে ভাবছে; আর আমরা ভাবছি হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবার ও ন্যায়বিচার নিয়ে’, বলেন নিউ ইয়র্কের ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর চাক শুমার।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন