যদি পরমাণুযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে পাক-ভারত!

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০১৬, ০৭:২৩ পিএম

ঢাকা: দুটি দেশই পারমাণবিক শক্তিধর। স্নায়ুযুদ্ধ ভেতরে ভেতরে লেগেই আছে। একদিকে আদর্শগত দ্বন্দ্ব, আরেকদিকে ভূ-রাজনৈতিক বিরোধ। সম্পর্কের টানাপোড়েনে কখনও শীতলতা, কখনও লাভা উদগীরণ। ভারতের কাশ্মীরে সেনাঘাঁটিতে হামলা ও সেনা সদস্য নিহত- তার জবাবে সার্জিকেল স্টাইক। এরপর দফায় দফায় উত্তেজনা গোলাগুলি।

দু’দেশই শান্তির পথে থাকতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আবার একই সঙ্গে কেউ কাউকে ছাড় দিতেও নারাজ। এমনি উত্তেজনা আর ঘাত-প্রতিঘাতের হুমকিতে প্রায় যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই তাই নানা জল্পনা-কল্পনা করছেন। যদি সত্যিই যুদ্ধে লিপ্ত হয় দেশ দুটি, তাহলে কী হবে পরিণতি?

গবেষণায় বলা হচ্ছে, পাক-ভারত পারমাণবিক যুদ্ধ হলে শুধু দুই দেশেরই নয়, গোটা বিশ্বেরই ক্ষতি হবে। বিশ্বব্যাপী দেখা দেবে দুর্ভিক্ষ। অন্তত ২০০ কোটি মানুষ প্রাণ হারাবে। প্রায় নিশ্চিহ্নও হয়ে যেতে পারে মানবসভ্যতা।

গত ২০১৩ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছিল। তাতে উল্লেখ করা ছিল, যদি সীমিত পর্যায়েও পারমাণবিক অস্ত্রের লড়াই হয় তবে, বিশ্বের আবহাওয়ামণ্ডলের ব্যাপক ক্ষতি ও শস্যক্ষেত্র ধ্বংস হবে। আর তার পরিণামে সারা পৃথিবীতে খাদ্যের বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়বে।

নোবেল শান্তি পুরস্কারবিজয়ী  ইন্টারন্যাশনাল ফিজিশিয়ানস ফর দ্য প্রিভেনশন অব নিউক্লিয়ার ওয়ার এবং ফিজিশিয়ানস ফর সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি নামে দু’টি সংগঠনের প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছিল, পরমাণু যুদ্ধের ফলে আবহাওয়ামণ্ডলে যে কার্বন অ্যারোসল কণা ছড়াবে, তাতে সুদূর আমেরিকাতেও কমপক্ষে এক দশক সময় ধরে কৃষি উৎপাদন প্রায় ১০ শতাংশ কমে যাবে। এ কণার প্রভাবে চীনে প্রথম চার বছরে গড়ে ২১ শতাংশ ও পরের ছ’বছর আরও ১০ শতাংশ ধান, গমের উৎপাদন কমে যাবে। 

১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ফেলা হয়েছিল মার্কিন পরমাণু বোমা। এতে দুটি শহরের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। শুধু কি তাই, সেই পরমাণু বোমার তেজষ্ক্রিয়তার প্রভাব জাপানের প্রজন্মের পর প্রজন্মকে বইতে হচ্ছে। বিশ্বে পরমাণু অস্ত্রের ভয়ঙ্কর মারণ ও ধ্বংসাত্মক ক্ষমতার প্রতীক হিরোশিমা ও নাগাসাকি।

আর এখনকার পারমাণবিক বোমা তো আরও শক্তিশালী, আরও ভয়ঙ্কর। বর্তমানের এ প্রেক্ষাপটে তাই বলা হয়েছিল, এখন কোনো পারমাণবিক যুদ্ধ মানেই মানবসভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সামিল। 

বলা হচ্ছে, ভারতের চেয়ে বেশি পরমাণু বোমা রয়েছে পাকিস্তানের কাছে। ভারতের রয়েছে ১১০-১২০টি আর পাকিস্তানের হাতে ১২০ থেকে ১৩০টি। মার্কিন সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফিজিশিয়ান্স ফর দ্য প্রিভেনশন অব নিউক্লিয়র ওয়ার-এর প্রতিবেদন অনুসারে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধ হলে দেখা দেবে আর্থিক বিপর্যয়। তেজষ্ক্রিয়তার প্রভাবে মিলিয়ে যাবে বায়ুমণ্ডলের অর্ধেক ওজোন স্তর। তৈরি হবে ‘পারমাণবিক শৈত্য’। মৌসুমী বায়ুর গতিপথে ওলট-পালট ঘটে যাবে। সারা বিশ্বের প্রায় দুই কোটি মানুষকে দুর্ভিক্ষের মুখে পড়তে হবে।

আমরা সবাই জানি, যুদ্ধের ফল কখনও সুখের হয় না, হয়না শান্তির। অতীতে ফিরে তাকালেই এর ভুরি ভুরি প্রমাণ মেলে। সর্বশেষ ১৯৩৯-১৯৪৫ অবধি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতায় কেঁপে উঠেছিল পুরো বিশ্ব। প্রাণহানির মোট সংখ্যা ছিল ৪ কোটি থেকে ৭ কোটি ২০ লাখ।