১৩ জাহাজ আটক, এখনও গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ৩০টি

  • সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫, ০৯:৪৮ এএম

গাজার ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ নিয়ে যাওয়া জাহাজবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ১৩টি নৌযান আটকে দিয়েছে ইসরায়েলের নৌবাহিনী। তবে এখনও গাজার উদ্দেশে এগিয়ে চলছে বহরের ৩০টি নৌযান।

১৩ জাহাজ থেকে আটক করা হয়েছে ৩৭ দেশের দুই শতাধিক অধিকারকর্মীকে। ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার’ মুখপাত্র সাইফ আবুকেশেক ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে জানান, ওই ১৩টি নৌযানে ৩৭ দেশের ২০১ জনের বেশি ছিলেন। তাঁদের মধ্যে স্পেনের ৩০ জন, ইতালির ২২ জন, তুরস্কের ২১ জন এবং মালয়েশিয়ার ১২ জন রয়েছেন।  

সাইফ আরও লিখেন, আটকের ঘটনার পরও ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার’ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এই বহরে থাকা নৌযানগুলো বাধার পরও গাজা অভিমুখে ভূমধ্যসাগরে ভেসে চলেছে।

পোস্টে সাইফ আরো লিখেছেন, আমাদের প্রায় ৩০টি নৌযান এখনো দখলদার বাহিনীর সামরিক জাহাজ থেকে দূরে সরে যাওয়ার জন্য লড়াই করছে। গাজার উপকূলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, অনুপ্রাণিত। তারা ভোরের মধ্যে এ (অবরোধ) ভেঙে একসঙ্গে পৌঁছানোর জন্য সবকিছু করছে।

খবরে বলা হয়েছে, আটক করা নৌযানগুলোর যাত্রীদের নিরাপদভাবে ইসরায়েলের বন্দরে নেয়া হয়েছে। বহরে থাকা সুইডিশ পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গকে আটক করা হয়েছে—তার সুস্থতা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। দুইপক্ষের বিবৃতিতে গ্রেটা ও অন্যান্য আটক ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যস্বরূপ সন্তোষজনক অবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়।

আন্তর্জাতিক ফ্লোটিলাটি চারটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ঐক্যমঞ্চ হিসেবে গঠিত—ফ্রিডম ফ্লোটিলা ফাউন্ডেশন, গ্লোবাল মুভমেন্ট টু গাজা, মাগরেব সুমুদ ফ্লোটিলা ও সুমুদ নুসানতারা।

সূত্রগুলো বলছে, গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বন্দর থেকে খাদ্য ও ঔষধে ভর্তি ৪৩টি নৌযান গাজার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল; জাহাজগুলোর ওপর রয়েছে প্রায় ৫০০ জন নাগরিক এবং স্বেচ্ছাসেবী, যারা ৪৪টি দেশের প্রবাসী, আইনজীবী, সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।

আটক করা জাহাজগুলোর মধ্যে অন্তত তিনটি নৌযানের নাম পরিচিত — স্পেক্টার, অ্যালমা এবং সাইরাস। আটককৃতরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টেলিগ্রামে ছোট ভিডিও ও ছবি পোস্ট করে জানাচ্ছেন, গাজার জন্য খাদ্য ও ওষুধ নিয়ে গমন করা এই বহরে ইসরায়েলের হস্তক্ষেপকে তারা অনৈতিক ও অবৈধ বলে অভিযোগ করেছেন। বহু যাত্রী নিজের পাসপোর্টসহ ছবি-ভিডিও প্রকাশ করেছেন, যাতে তাদের আটক হওয়ার প্রমাণ মেলে।

ইউরোপীয় একাধিক নেতা-দপ্তর এই ঘটনার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস এক্স (টুইটার)-এ লিখেছেন, এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক — একটি শান্তিপূর্ণ মানবিক মিশন লক্ষ্য করে এই ধরনের হস্তক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত নয়।

ফ্লোটিলার পক্ষও একটি বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলের এসব পদক্ষেপ আমাদের থামাতে পারবে না; আমরা গাজার জন্য মানবিক করিডর খোলার লক্ষ্যে আমাদের মিশন চালিয়ে যাব।

ইসরায়েল সাধারণত সন্দেহভাজন বা নিরাপত্তার ঘটনার আশঙ্কায় সামুদ্রিক ইতরাক-পরিচয়ের অভিযান চালায় এবং বলা হয়ে থাকে যে হামাসের সাথে এই ধরনের উদ্যোগের কোনো সম্পর্ক আছে—তবে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো বহুবার বলেছে তাদের মিশন সশস্ত্র নয় ও শুধুমাত্র মানবিক সহায়তা বহন করে। বর্তমান ঘটনায় দুইপক্ষেরই বিরোধী বক্তব্য থাকায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কারা-কী আবেদন করেছে এবং পরবর্তী করণীয় কী, তা নিয়ে তাত্ক্ষণিক কূটনৈতিক চাপ ও বিবৃতি প্রত্যাশিত।

এমন পরিস্থিতিতে ফ্লোটিলার বাকী নৌযানগুলো গাজার উপকূলের দিকে অগ্রসর—তারা কি করে স্থির রুটে পৌঁছতে পারবে এবং ইসরায়েলের সাথে তাদের সংঘর্ষ-পরবর্তী পরিস্থিতি কেমন হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। ইসরায়েলি আটককৃতদের ভবিষ্যৎ ব্যবস্থাপনা ও আলোচিত চালনা দুটোই আন্তর্জাতিক নজরে রয়েছে এবং এই ঘটনার ওপর আন্তর্জাতিক আইন, মানবিক প্রবেশাধিকার ও সমুদ্রনিরাপত্তার প্রশ্নগুলো জায়গা করে নেবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

সূত্র: রয়টার্স, আলজাজিরা ও ইসরায়েলের সরকারি বার্তা