বিদেশের একমাত্র সামরিক ঘাঁটি থেকে গোপনে সৈন্য প্রত্যাহার ভারতের

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২৫, ০৯:২৬ এএম
ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা: মধ্য-এশিয়ার দেশ তাজিকিস্তানে অবস্থিত ভারতের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ বিদেশি সামরিক ঘাঁটি থেকে দেশটি নিজেদের সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম অনেকটা চুপিসারে সরিয়ে নিয়েছে। আয়নি বিমানঘাঁটি থেকে সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে ওই অঞ্চলে নয়াদিল্লির প্রায় দুই দশকের সামরিক উপস্থিতির সমাপ্তি ঘটেছে, যা ভারতের দীর্ঘমেয়াদী আঞ্চলিক প্রভাব নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে।

ভারতীয় দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালেই সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে ভারত এবং বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে গত মাসে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এটি মধ্য-এশিয়ায় ভারতের কৌশলগত শক্তি হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়।

আয়নি বিমানঘাঁটি তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবের কাছে অবস্থিত। এটি সোভিয়েত আমলে নির্মিত।  এই ঘাঁটিটি আফগানিস্তানের ওয়াখান করিডোর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে ছিল, যা ভারতকে ভূরাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল অঞ্চলে বিরল কৌশলগত সুবিধা দিয়েছিল। সর্বোচ্চ কার্যক্রম চলাকালীন সেখানে সুখোই-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমানসহ ভারতীয় সামরিক বাহিনীর প্রায় ২০০ সদস্য অবস্থান করতেন।

[260191]

২০০২ সালে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে ভারত প্রায় ৮ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে ঘাঁটিটি আধুনিক করে তোলে। ভারতের বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন (বিআরও) সেখানে ৩২০০ মিটার রানওয়ে, বিমান হ্যাঙ্গার, জ্বালানি ডিপো এবং এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল।

সরকারি ব্যাখ্যা অনুযায়ী, তাজিকিস্তানের সঙ্গে সীমিত দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার অংশ হিসেবেই এই ঘাঁটিতে ভারতের উপস্থিতি ছিল, যার লক্ষ্য ছিল ঘাঁটির সংস্কার ও উন্নয়ন। এই চুক্তির মেয়াদ ২০২২ সালে শেষ হয় এবং ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘাঁটিটি তাজিক সরকারের কাছে হস্তান্তর করে।

তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলোর দাবি, তাজিকিস্তান রাশিয়া ও চীনের ক্রমবর্ধমান চাপে ছিল। ফলে দেশটি ভারতের সঙ্গে চুক্তি নবায়নে অনীহা দেখায় এবং এর পরই ভারত নীরবে নিজের কর্মী ও সরঞ্জাম সরিয়ে নেয়।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, আয়নি বিমানঘাঁটি ছিল ভারতের একমাত্র সক্রিয় বিদেশি সামরিক স্থাপনা। এটি শুধু প্রতীকী নয়, কৌশলগতভাবেও মধ্য-এশিয়ায় ভারতের উপস্থিতির প্রতিফলন ছিল। সেখান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার ভারতের কৌশলগত শক্তি হ্রাসের ইঙ্গিত দেয় এবং ওই অঞ্চলে চীন ও রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় ভারতের সক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়বে।

পর্যবেক্ষকদের মতে, ভারত এখনও নিজের প্রতিবেশী এলাকার বাইরে দীর্ঘমেয়াদী সামরিক উপস্থিতি টিকিয়ে রাখতে পারেনি।

উল্লেখ্য, বর্তমানে ভারতের কোনো পূর্ণাঙ্গ বিদেশি সামরিক ঘাঁটি চালু নেই। ২০২৪ সালে ভারত ও মরিশাস যৌথভাবে পশ্চিম ভারত মহাসাগরের আগালেগা দ্বীপপুঞ্জে উন্নত একটি বিমানবন্দর ও জেটি উদ্বোধন করে, যা ভারতের নৌবাহিনীর কার্যক্ষমতা বাড়াতে এবং ওই এলাকার ওপর নজরদারি জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এসআই