বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর নয়াদিল্লিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে মিলিত হয়েছেন। পশ্চিমা চাপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হুমকি ও ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে চলমান আলোচনার পটভূমিতেও দুই নেতা তাদের সম্পর্ককে স্থিতিশীল শক্তির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি এই সম্পর্ককে ‘মেরু নক্ষত্রের মতো অটল’ বলে প্রশংসা করেছেন। অন্যদিকে, পুতিন ‘বহিরাগত চাপ প্রতিরোধ’ এবং পারস্পরিক বন্ধনে বিনিয়োগের জন্য মোদির প্রশংসা করেছেন।
মূল আলোচনা ও চুক্তির বিষয়বস্তু
এই শীর্ষ সম্মেলনের মূল বিষয়বস্তু ছিল— বাণিজ্য, জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সম্পর্ক গভীর করা।
মোদি বলেছেন, এই চুক্তিগুলো ২০৩০ সাল পর্যন্ত ভারত-রাশিয়া অর্থনৈতিক সহযোগিতা কর্মসূচির আওতায় ‘ভারত-রাশিয়া অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে নতুন উচ্চতায়’ নিয়ে যাবে। দেশগুলো ১০০ বিলিয়ন ডলারের উচ্চাভিলাষী বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রায় একমত হয়েছে।
দুই পক্ষের একাধিক মন্ত্রীর মধ্যে জ্বালানি থেকে কৃষি ও ওষুধ শিল্প পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাণিজ্য ও সহযোগিতা সম্প্রসারণের জন্য সমঝোতা স্মারক বিনিময় হয়।
পশ্চিমাদের জন্য একটি বড় সংকেত হিসেবে পুতিন বলেছেন, রাশিয়া ভারতে জ্বালানি নিরবচ্ছিন্নভাবে চালানোর জন্য প্রস্তুত।
রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল আমদানির কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করেছিল।
এর জবাবে পুতিন বলেন, যদি ওয়াশিংটন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য রাশিয়ান পারমাণবিক জ্বালানি (ইউরেনিয়াম) কিনতে পারে, তবে ভারতের কেন একই সুযোগ থাকবে না? তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে এটি নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত।
২০২২ সাল থেকে ভারত-রাশিয়া বাণিজ্যে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে, যা ১০ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে রেকর্ড ৬৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যার মূল কারণ ভারতের ছাড়কৃত রাশিয়ান তেল ক্রয়।
পুতিন তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসভ ও অন্যান্য সামরিক শিল্প কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে দিল্লিতে আসেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেলোসভ ভারতের দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পে সক্ষমতা বাড়াতে নয়াদিল্লিকে সমর্থন করার জন্য রাশিয়ার প্রস্তুতির ওপর জোর দিয়েছেন।
মোদি পুতিনের সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করেছেন ও পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে, ভারত ‘শুরু থেকেই শান্তির পক্ষে দাঁড়িয়েছে’ এবং ‘এটি যুদ্ধের যুগ নয়’। তবে ভারত রাশিয়াকে যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানায়নি।
মোদি বলেন, ভারত ও রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে একে অপরকে সমর্থন করে আসছে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে।
পুতিন বলেছেন, ব্রিকস দেশগুলোর সঙ্গে মিলে ভারত ও রাশিয়া একটি আরও ন্যায়সঙ্গত এবং বহুমেরু বিশ্বকে প্রচার করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই শীর্ষ সম্মেলনের সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো এই ইঙ্গিত দেওয়া যে কোনো পক্ষই এই সম্পর্ককে দুর্বল করতে চায় না এবং তারা যেকোনো বহিরাগত চাপ সহ্য করতে প্রস্তুত। নয়াদিল্লি এখন একটি খণ্ডিত বিশ্ব ব্যবস্থায় ‘বহু-সারিবদ্ধ’ পররাষ্ট্র নীতি বজায় রাখার জন্য তার কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন অক্ষুণ্ন রাখতে চাইছে।
পুতিনের দিল্লি সফর অন্যান্য বিশ্ব নেতাদের কাছেও একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠিয়েছে যে, ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি চুক্তি সম্পাদনের জন্য তার ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ সত্ত্বেও ‘মস্কো একা নয়, এবং ক্রেমলিনকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে’।
এম