কুকুর নিয়ে ঝগড়ার কারণেই বরখাস্ত হন প্রেসিডেন্ট!

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০১৭, ১০:০৭ এএম
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট পাক গান হে

ঢাকা: বর্তমান বিশ্বে এখন বেশ আলোচিত একটি ঘটনা দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পাক গান হের অভিশংসন। সবার মনেই এখন প্রশ্ন শুধু কী দুর্নীতির কারণেই তার অভিংশসন না এর পিছনে অন্য কোন ঘটনা রয়েছে? ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হচ্ছে এক বিচিত্র ঘটনার কথা। তারা বলছে পাকের অভিশংসনের পিছনে না কি একটি কুকুর ছানার ভূমিকা রয়েছে! 

ওই প্রতিবেদনে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতি নিয়ে যারা খবর রাখে তাদের বরাত দিয়ে বলা হয়, এই পতনের সূচনা হয়েছিল 'একটি কুকুরছানা নিয়ে' এক ঝগড়া থেকে। ঝগড়াটি বেধেছিল প্রেসিডেন্ট পাক গান হে-র বান্ধবী চোই সুন-সিল এবং তার কথিত প্রেমিক সাবেক ফেন্সিং-তারকা কো ইয়ং তাই এর মধ্যে।

সুদর্শন এবং সুঠাম দেহের অধিকারী ৪০ বছর বয়স্ক কো-র সাথে ৬০ বছর বয়স্ক চোইয়ের সম্পর্ক নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় গুজবের শেষ ছিল না। তবে তারা নিজেরা বলেন তারা ছিলেন শুধুই বন্ধু, কখনোই প্রেমের সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন নি।

তবে সেই 'বিখ্যাত' ঝগড়ার কারণ কি - তা কো পরে নিজেই বর্ণনা করেছেন। চোই-এর মেয়ের একটি পোষা কুকুরছানা ছিল এবং একদিন সেই কুকুরটি দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন কো-কে।

কো ইয়ং তাই

কো কুকুরটি তার বাড়িতে নিয়ে এলেন, এবং সেটাকে ঘরে রেখে তিনি আবার বেরিয়ে গেলেন গলফ খেলতে। তিনি খেলা শেষে বাড়ি ফিরে দেখলেন, সেখানে বসে আছেন চোই, এবং তিনি চরম ক্ষিপ্ত - কারণ কো কুকুরটিকে বাড়িতে একা ফেলে রেখে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।

তাদের মধ্যে ভীষণ ঝগড়া হলো। চোইয়ের এই আচরণে মি. কো এতটাই ক্ষুব্ধ হলেন যে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন - দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে চোইয়ের সম্পর্কের কথা তিনি ফাঁস করে দেবেন।

এর পর তিনি প্রেসিডেন্ট পাক গান হে'র প্রশাসনে চোইএর প্রভাব খাটানোর প্রমাণ সংগ্রহ করলেন, এমন সব সিসিটিভি ফুটেজ জোগাড় করলেন- যেখানে চোই প্রেসিডেন্টের সহকারীদের তার ব্যক্তিগত চাকরবাকরের মত ব্যবহার করছেন। এর পর তিনি সেসব প্রমাণ একটি স্থানীয় মিডিয়ার কাছে তুলে দিলেন।

কো-র সাথে চোই সুন-সিলের পরিচয় হয়েছিল যখন ফেন্সিংএ এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদক জেতার পর কো অবসর নিয়ে 'ভিলোমিলো' নামে মেয়েদের পোশাক ও হ্যান্ডব্যাগ তৈরির একটি কোম্পানি চালাতেন।

এরই সূত্রে চোই সুন-সিলের সাথে পরিচয় হয় তার এবং তাকে তিনি পোশাক সরবরাহ শুরু করেন - যার আসল গ্রাহক ছিলেন প্রেসিডেন্ট পাক গান হে। তাকে তিনি উটপাখী ও কুমিরের চামড়ার তৈরি হাজার হাজার ডলার দামের হ্যান্ডব্যাগ এবং অন্যন্য বিলাসবহুল পোশাক সরবরাহ করেন।

কো বলেছেন, এসব পোশাকের দাম পরিশোধ করতেন চোই। প্রেসিডেন্ট পাকের হাতে ভিলোমিলোর হ্যান্ডব্যাগ দেখা যাবার পর কো-র সুনামও বাড়তে থাকে। একই সাথে ঘনিষ্ঠ হতে থাকে মিজ চোইয়ের সাথে তার ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক।

চোই সুন-সিল

গত বছর অক্টোবর মাসে কো নিই টিভিতে একটি সাক্ষাতকারে বলেন, চোইয়ের সবচেয়ে প্রিয় ছিল পাকের প্রেসিডেন্সিয়াল ভাষণগুলো সম্পাদনা করা।

এর পর সাংবাদিকরা অনুসন্ধানে একটি ট্যাবলেট খুঁজে পান, তাতে চোইয়ের সেলফি - যার পাশে রয়েছে প্রেসিডেন্ট-এর ভাষণের কাগজপত্র। এর পর আরো অভিযোগ উঠলো, চোইয়ের বিভিন্ন সন্দেহজনক ব্যবসায়িক তৎপরতা নিয়ে। জনমনে তৈরি হলো ব্যাপক ক্ষোভ।

শুরু হলো ব্যাপক তদন্ত। শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পাক স্বীকার করলেন যে তিনি তার বান্ধবীকে সরকারের কাজকর্মে নাক গলানোর অন্যায় সুযোগ দিয়েছিলেন, তবে দুর্নীতির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই সব অভিযোগই তার অভিশংসন এবং ক্ষমতাচ্যূতি ডেকে আনলো।

সোনালীনিউজ ডটকম/ঢাকা/এআই