যুক্তরাজ্যে আড়াই মাসে তৃতীয় হামলা, নিহত ৩৪

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ৪, ২০১৭, ১০:৩৫ পিএম
হামলার পরে সতর্ক পুলিশ

ঢাকা: যুক্তরাজ্যে এর আগে সর্বশেষ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল গত ২২ মে ম্যানচেস্টারের একটি কনসার্ট হলে। সেটি ছিল আত্মঘাতী বোমা হামলা। গত আড়াই মাসে প্রথম হামলাটি হয়েছিলে গত ২২ মার্চ। সর্বশেষ শনিবার (৩ জুন) রাতে সন্ত্রাসী হামলা হয়। আড়াই মাসের ব্যবধানে এ নিয়ে তৃতীয়বার হমলা হলো দেশটিতে। এতে এ পর্যন্ত ৩৪জন নিহত হয়েছেন। 

মাত্র ১২ দিনের মাথায় আবারও সন্ত্রাসী হামলার শিকার হলো যুক্তরাজ্য। লন্ডনের অন্যতম বিনোদন আকর্ষণ লন্ডন ব্রিজে ফুটপাতের পথচারীদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। এরপর কিছু দূর এগিয়ে বোরো মার্কেট এলাকায় চালায় এলোপাতাড়ি ছুরি হামলা। সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, এ ঘটনায় মোট সাতজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪৮ জন। আর পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে সন্দেহভাজন তিন হামলাকারী।

পুলিশের পক্ষ থেকে এ ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অন্যদিকে জেরার্ড নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেন, এক হামলাকারী বলছিল ‘এটা আল্লাহর জন্য’। অবশ্য তিন হামলাকারী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।

গত ২২ মে ম্যানচেস্টারের কনসার্ট হলে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ২২ জন নিহত হওয়ার রেশ না কাটতেই এ হামলা হলো। এর আগে গত ২২ মার্চ একই কায়দায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বাইরে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল। তখন হামলাকারী খালিদ মাসুদ ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজে পদচারীদের গাড়িচাপা দেয়ার পর পার্লামেন্টের নিরাপত্তারক্ষীর ওপর ছুরি হামলা চালান। ওই ঘটনায় এক পুলিশ সদস্যসহ নিহত হয়েছিলেন পাঁচজন।

এদিকে সন্ত্রাসী হামলার কারণে আবারো থমকে গেল যুক্তরাজ্যের নির্বাচনী প্রচারণা। হতাহত ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান জানিয়ে রোববার প্রচার বন্ধ রাখে প্রধান দলগুলো। ম্যানচেস্টারের ঘটনায়ও তিন দিন বন্ধ ছিল নির্বাচনী প্রচার। আসছে বৃহস্পতিবার (৮ জুন) যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচন।

বিশ্লেষকদের মতে, সন্ত্রাসী হামলা ও প্রচারকাজ বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিরোধী দল লেবার পার্টি। দলটি ‘জনকল্যাণমূলক’ ইশতেহার দিয়ে প্রচারে যে সাড়া ফেলেছিল, সন্ত্রাসের ঘটনায় তা আবারো চাপা পড়ে গেল। প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে শনিবারের হামলার ধরনকে সন্ত্রাসের ঝুঁকির ‘নতুন প্রবণতা’ উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ দমনে নতুন চারটি কর্মপন্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়।’

লেবার নেতা জেরিমি করবিন ‘বর্বর ও জঘন্য’ সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানান। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশংসা করেন এবং হতাহত ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানান। শনিবার রাতে যে এলাকায় হামলা হলো, সেটি লন্ডনে পর্যটন ও বিনোদনের অন্যতম আকর্ষণ। ওই এলাকা হোটেল, রেস্তোরাঁ, পানশালা ও নৈশক্লাবে ঠাসা। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ার ওই রাতে মানুষের ভিড়ও ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। ফলে হামলার খবরে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

জানা যায়, স্থানীয় সময় শনিবার রাত ১০টার দিকে লন্ডন ব্রিজে বেশ কয়েকজন পথচারীকে চাপা দেয় একটি সাদা ভ্যান। এটি দ্রুতগতিতে বারা হাই স্ট্রিট ধরে কিছু দূর এগিয়ে ‘বারা মার্কেট’ এলাকার ‘ব্যারো বয় অ্যান্ড ব্যাংকার পাব’ নামে একটি পানশালার দেয়ালে বিধ্বস্ত হয়। ওই ভ্যান থেকে তিন হামলাকারী নেমে আশপাশের মানুষকে ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আক্রমণ করতে থাকে। তারা আশপাশের পানশালাগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা করে।

পুলিশ জানিয়েছে, রাত ১০টা ৮ মিনিটে তারা হামলার খবর পায়। দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা মাত্র ৮ মিনিটে তিন হামলাকারীকে গুলি করে নিবৃত্ত করে। একই সময়ে পার্শ্ববর্তী ভক্সহল এলাকায় ছুরি হামলার ঘটনা ঘটলেও লন্ডন ব্রিজের ঘটনার সঙ্গে তা সম্পৃক্ত নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আতা