ভূমিকম্প কখন, কোথায় বা কত বড় মাত্রায় আঘাত হানবে-এটি আগাম বলা প্রায় অসম্ভব। অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ভূমিকম্পের সংকেতও স্পষ্ট নয়। বাংলাদেশ সক্রিয় ভূকম্পন অঞ্চলে থাকায় ভবিষ্যতে বড় ধরনের ভূমিকম্প ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি কমাতে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। প্রস্তুতি বলতে শুধু কিছু নিয়ম মুখস্থ করা নয়, বরং জীবনযাত্রা, বাসস্থানের গঠন এবং পরিবারের নিরাপত্তা পরিকল্পনাকেও সাজানো বোঝায়।
দেশের অধিকাংশ ভবন ভূমিকম্প-সহনশীল নয়। প্রকৌশলীরা বলছেন, বড় ধসের মূল কারণ দুর্বল গঠন ও অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ। তাই প্রথম ধাপ হচ্ছে বাসার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
* ভবন নির্মাণ বা সংস্কারের সময় প্রকৌশলীর মাধ্যমে সিসমিক স্ট্যান্ডার্ড নিশ্চিত করা
* দেয়াল বা ছাদে ফাটল থাকলে দ্রুত মেরামত করা
* বুকশেলফ, কাচের আলমারি, ফ্রিজ, আলনা—এসব দেয়ালে শক্তভাবে আটকানো আছে কি না পরীক্ষা করা
* পানির ট্যাঙ্ক, গ্যাস লাইন, সিলিন্ডার, সোলার প্যানেল যেন কম্পনে না পড়ে তার ব্যবস্থা করা
* সিঁড়ি ও বহির্গমন পথ সবসময় খোলা ও বাধামুক্ত রাখা
প্রকৌশলীদের ভাষ্য, বাংলাদেশে মৃত্যু কম হলেও ভবনের ধস বড় দুর্যোগ ডেকে আনে। তাই শক্ত কাঠামো নিশ্চিত করা সবচেয়ে জরুরি।
ভূমিকম্পে আতঙ্কই সবচেয়ে বড় শত্রু। আগে থেকে পরিকল্পনা থাকলে পরিবারের সবাই জানবে—কী করতে হবে।
* প্রতি পরিবারের জন্য একটি জরুরি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করুন
* বাড়ির নিরাপদ জায়গা ও বহির্গমন পথ দেখান
* সপ্তাহে অন্তত একবার ড্রিল বা রিহার্সাল করুন
* ঘুমানোর জায়গার কাছে জুতা, টর্চলাইট, মোবাইল, হালকা ব্যাগ রাখুন
* শিশু ও বয়স্কদের আলাদা নির্দেশনা দিন
ভূমিকম্পের পর বিদ্যুৎ, পানি বা খাবার সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ৭২-ঘণ্টার জরুরি ব্যাগ পরিবারের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
জরুরি ব্যাগে রাখা উচিত- পানি (প্রতি ব্যক্তি অন্তত ৩ লিটার), শুকনা খাবার, প্রাথমিক চিকিৎসার কিট, প্রেসক্রিপশনের ওষুধ, টর্চলাইট ও অতিরিক্ত ব্যাটারি, পাওয়ার ব্যাংক, গুরুত্বপূর্ণ কাগজের ফটোকপি, নগদ টাকা, বাঁশি, মাস্ক, ছোট কম্বল, স্যানিটারি আইটেম। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের জন্য ব্যাগ আরও বিস্তৃত করা যাবে।
ভূমিকম্পের সময় নিরাপদ জায়গা
* শক্ত টেবিল বা ডেস্কের নিচে
* লোড-বেয়ারিং দেয়ালের পাশে
* জানালা, কাচ, ভারী শেলফ থেকে দূরে
* রান্নাঘর ও বাথরুম এড়িয়ে নিরাপদ কোণ
প্রকৌশলীরা বলছেন, মৃত্যুর প্রধান কারণ পড়া বস্তু, জানালার কাচ ও ভাঙা আসবাব। তাই এগুলো থেকে দূরে থাকা জরুরি।
* গ্যাস লাইনের মুখ কোথায়, কীভাবে বন্ধ করতে হয় তা পরিবারের সবাই জানবে
* বৈদ্যুতিক সুইচবোর্ডে আগুন লাগলে মেইন সুইচ বন্ধ করুন
* গ্যাস সিলিন্ডার নিরাপদ ও দেয়ালঘেঁষা স্থানে রাখুন
* পানি সংযোগের মেইন ভালভ কোথায় তা শিখুন
ভূমিকম্প হলে মানুষ আতঙ্কে দৌড়াতে গিয়ে আহত হয়। নিয়মিত ড্রিল করলে আতঙ্ক কমে এবং আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। শিশুদের খেলার মাধ্যমে নিরাপত্তা নির্দেশনা শেখানোও কার্যকর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্প ঠেকানো সম্ভব নয়, তবে ক্ষয়ক্ষতি কমানো পুরোপুরি আমাদের প্রস্তুতির ওপর নির্ভরশীল। প্রস্তুতি থাকলে জীবন বাঁচানো সম্ভব। তাই আজই নিজের বাসা, পরিবার ও পাড়া—সব জায়গার নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়ে নেওয়া জরুরি।
এসএইচ