বইয়ের মেলায় ফাগুন হাওয়া

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪, ১১:৪০ এএম

ঢাকা : মঙ্গলবার বিকেলে হলুদ শাড়িতে সেজে বইমেলায় এসেছেন তিন বান্ধবী রিকিতা, সুমাইয়া এবং রাইসা। তিনজনই ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বললেন, ফাগুনের জন্যই তাদের একসঙ্গে শাড়ি পরে মেলায় আসা।

বাংলাদেশে এক সময় বাংলা পঞ্জিকার ফাল্গুন মাস শুরু হত গ্রেগরীয় পঞ্জিকার ১৩ ফেব্রুয়ারি, পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনস ডে। পর পর দুই দিন আনন্দ উদযাপনের দারুণ উপলক্ষ পেয়ে যেতেন তরুণ-তরুণীরা।

কিন্তু বাংলা পঞ্জিকার পরিবর্তনে এখন ফাল্গুন শুরু হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি, ফলে দুই উদযাপন এখন একই দিনে। তবে এখনও অনেকে আগের রীতিতে ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্তের আগমন উদযাপন করেন। মঙ্গলবারের বইমেলায় দেখা গেল সেই রঙেরই ছটা।  

অনেকেই মেলায় এসেছিলেন ফাগুনের সাজে। মেয়েরা পরেছেন শাড়ি, ছেলেরা পাঞ্জাবি। কেউ আবার পরিবারের সবাই মিলে এসেছেন একই রঙের পোশাক পরে।

[217471]

কোনো কোনো স্টলে বিক্রয়কর্মীদেরও হলুদ শাড়ি আর সাদা পাঞ্জাবিতে দেখা গেল। এমন দৃশ্য যেন বলে গেল, বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।

মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ছিল বইমেলার ত্রয়োদশ দিন। মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিভিন্ন প্রকাশনীর স্টলে বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিক্রিও বাড়ছে মেলায়।

মেলা পরিচালনা কমিটির জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, মঙ্গলবার মেলার তথ্যকেন্দ্রে নতুন বই জমা পড়েছে ১১০টি।

ঘাসফড়িং প্রকাশনীর রত্না দাশ বলেন, মেলায় লোক সমাগমের পাশাপাশি এখন বিক্রিও বাড়ছে।

আগামী, সময়, অবসর, অন্বেষা, সাহিত্য প্রকাশসহ অন্তত দশটি প্রকাশনীর স্টলের বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানালেন, মেলার শুরুর দিক থেকে এখন বিক্রি বেশি হচ্ছে।

আগামীর স্বত্ত্বাধিকারী ওসমান গণি বলেন, মেলার শুরুর দিকে লোকজন এলেও বিক্রি মূলত জমে ওঠে বসন্তের দিন থেকেই। কাল থেকে মেলা আরও জমবে বলে আশা করছি।

[217460]

কপিরাইট অফিসের অভিযান : মঙ্গলবার বিকেলে বইমেলায় অভিযান চালিয়েছে কপিরাইট অফিস। তারা কারো বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলেও অন্তত ১০টি প্রকাশনা স্টলে কপিরাইট বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কপিরাইট আইন মেনে বই প্রকাশ করা হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখেছে।

কপিরাইট অফিসের ডেপুটি রেজিষ্ট্রার আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন। তার সঙ্গে ছিলেন বইমেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব এস এম জাহাঙ্গীর কবীর এবং শাহবাগ থানার পুলিশ।

তারা প্রথমে শিশুচত্বরে গিয়ে আদিগন্ত প্রকাশন, শিশু-কিশোর প্রকাশন, বাবুই, জনতা প্রকাশের স্টল পরিদর্শন করেন এবং বই দেখেন।

পরে সাহিত্য প্রকাশ, দিব্য প্রকাশ, আগামী প্রকাশনীর স্টল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, আমরা আজকে মূলত কপিরাইট আইন মানা হচ্ছে কিনা, তা দেখেছি। বিভিন্ন স্টলে ঘুরে মনে হয়েছে কপিরাইট আইনের বিষয়ে কেউ কেউ সচেতন না। তাদেরকে মৌখিকভাবে সতর্ক করেছি।

বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের ছবি বইয়ে ব্যবহার করা হলে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুমোদন নেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো কোনো প্রকাশক তা মানছেন না বলে মনে হয়েছে কপিরাইট অফিসের ডেপুটি রেজিষ্ট্রারের কাছে।

তিনি বলেন, স্টলে আমরা বিক্রয়কর্মীদের পেয়েছি, তারা সঠিক তথ্য দিতে পারেননি। বই প্রকাশের ক্ষেত্রে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। এছাড়া অনুবাদ সাহিত্যও অনুমতি নিয়ে প্রকাশ করছে কিনা, বিক্রয়কর্মীরা তা জানাতে পারেননি।

আমরা আবার অভিযান করব। তাদেরকে অনুমোদনপত্র মোবাইল ফোনে বা ফটোকপি করে স্টলে রাখার জন্য বলেছি। তারা দেখাতে ব্যর্থ হলে পরে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বই প্রকাশের ৬০ দিনের মধ্যে নতুন বইয়ের এক কপি গ্রন্থাগার আর্কাইভে জমা দেওয়ার ব্যাপারেও মেলায় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে সচেতন করেন কপিরাইট অফিসের এই কর্মকর্তা।

মূল মঞ্চ

বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হয় ‘স্মরণ: সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আহমাদ মোস্তফা কামাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন হরিশংকর জলদাস এবং ফারজানা সিদ্দিকা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি জাহিদ হায়দার, হেনরী স্বপন, শিহাব শাহরিয়ার, মতিন রায়হান, জুনান নাশিত, টিমোনী খান রিনো, সাকিরা পারভীন এবং মুঃ আহসান উল্লাহ ইমাম খান তমাল। আবৃত্তি পরিবেশন করে নাসিমা খান বকুল, ফয়জুল্লাহ সাঈদ এবং চন্দ্রিমা দেয়া।

এছাড়া ছিল তুনাজ্জিনা রহমত মৌরীর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘গীতিকবি আনিসুল হক স্মৃতি পরিষদ’, ‘হামিবা সাংস্কৃতিক একাডেমি’ এবং সৌন্দর্য প্রিয়দর্শিনীর পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘প্রিয়দর্শিনী’র পরিবেশনা।
বইয়ের মেলায় ফাগুন হাওয়া

সংগীত পরিবেশন করেন হারুনুর রশিদ, মিতা চক্রবর্তী, শ্রাবন্তী সরকার, আফরোজা খান মিতা, শহীদ কবীর পলাশ, মো. মজিবুর রহমান, ফারহানা ফেরদৌসী তানিয়া, মাহবুবা রহমান এবং এম এম উম্মে রুমা। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন পুলিন চক্রবর্তী  (তবলা), রবিনস চৌধুরী (কী-বোর্ড), মো. মামুনুর রশিদ (বাঁশি), ফিরোজ খান (সেতার)।

এদিন লেখক বলছি মঞ্চের অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন নাট্যকার ও অনুবাদক খায়রুল আলম সবুজ, গবেষক আফরোজা পারভীন, কবি শিহাব শাহরিয়ার এবং শিশুসাহিত্যিক কামাল হোসাইন।

পহেলা ফাল্গুনে যা থাকবে : বুধবার পহেলা ফাল্গুন। এদিন বইমেলার চতুর্দশ দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।

বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হবে ‘ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন রাফাত আলম মিশু।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন সুজাতা হক এবং মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী।

এমটিআই