থার্মাল স্ক্যানার সচল হয়নি দেড় মাসেও

করোনা ভাইরাস ঝুঁকিতে ওসমানী বিমানবন্দর

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০, ০৩:৫৫ পিএম

ঢাকা : করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। কারণ ওই বিমানবন্দরের থার্মাল স্ক্যানার দীর্ঘদিন ধরে অচল। ঝুঁকি এড়াতে সেখানে থার্মাল স্ক্যানার সচল করতে একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বেশ কয়েক দিন আগে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত ওই স্ক্যানারটি সচল করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থা এবং ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গোয়েন্দা সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, ওই বিমানবন্দর দিয়ে যে কোনো মুহূর্তে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ‘কোভিড-১৯’ রোগী বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে। এ সংক্রান্ত একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন বাংলাদেশের খবরের হাতে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মধ্যে রাজধানীর হযরত শাহ জালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রামের চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশ থাকা আসা ব্যক্তিদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে। কিন্তু সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ সুযোগ নেই। তাই জরুরি ভিত্তিতে থার্মাল স্ক্যানারটি সচল করা প্রয়োজন।

ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, করোনা ভাইরাস চিহ্নিতকরণে এই মুহূর্তে থার্মাল স্ক্যানার না বসিয়ে নিরাপত্তার জন্য সেখানে সম্প্রতি বসানো হয়েছে শরীর তল্লাশি মেশিন বা বডি স্ক্যানার। জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) দেওয়া এ বডি স্ক্যানার মেশিনটির কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিনিয়র নিরাপত্তা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ওই স্ক্যানারের দায়িত্ব আমাদের নয়। ওটি সিভিল সার্জনের অফিস থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে তারা ভালো বলতে পারবেন।

তিনি জানান, থার্মাল স্ক্যানার অকার্যকর থাকায় বিকল্প হিসেবে আমরা হ্যান্ড মেটাল স্ক্যানার দিয়ে যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপছি। সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মণ্ডল বলেন, এ বিষয়ে ভালো বলতে পারব না। আন্তর্জাতিক রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ভালো বলতে পারবে। থার্মাল স্ক্যানার অচলের বিষয়টি আমরা তাদের জানিয়েছি।

তারা জানিয়েছে, এটা সচল হতে অনেক সময় লাগবে। তবে কতদিন সময় লাগবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি।

সিলেট ওসমানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্টেশন ম্যানেজার হাফিজ আহমেদ বলেন, বিমানবন্দরের স্ক্যানার মেশিনটি গত দেড় বছর ধরে নষ্ট। সেটা সচল করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তা এখনো ঠিক করা সম্ভব হয়নি। তাই এখন ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে করোনা ভাইরাস নির্ণয় করা হচ্ছে।

গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে করোনা ভাইরাস দেখা দেওয়ার পর রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত চীনেরই প্রায় আড়াই হাজার লোক মারা গেছে। এখন পর্যন্ত সেখানে পৌনে এক লাখ লোক এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ড, হংকং, অস্ট্রেলিয়া, কম্বোডিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, মালয়েশিয়া, নেপাল, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, ফিনল্যান্ড এবং ভিয়েতনামসহ বিশ্বের ২৫টি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো এটি ছড়ায়নি।

তবে শনাক্তকরণ মেশিন (থার্মাল স্ক্যানার) অকার্যকর থাকায় ওসমানী বিমানবন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক যাত্রীদের মাধ্যমে দেশে এ ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা আছে। বিষয়টি নিয়ে জনমনে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। তাই দেশে ভাইরাস আসার আগেই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলি টানেল এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলওয়েসহ অনেক মেগা প্রকল্পে চীনা নাগরিকসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশি নাগরিকরা কাজ করছে। তাই ওইসব দেশের নাগরিকদের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা আছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৬ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে অজ্ঞাত জ্বরে একই পরিবারের দুজনের মৃত্যু হয়। ওই এলাকায় ওয়াসার পানি শোধনাগারে চীনা নাগরিক কর্মরত থাকায় ওই দুজনের মৃত্যু করোনা ভাইরাসে হয়েছে বলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একটি বিশেষ ফ্লাইটে চীনের উহান শহর থেকে ৩১২ জন যাত্রীকে দেশে আনা হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তাদের শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ওই বিমানে ৩১৬ জন যাত্রী আসার কথা থাকলেও অতিরিক্ত জ্বরের কারণে চারজনকে বিমানে আরোহণ করানো হয়নি।

প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

বিমানবন্দরসমমূহ মেডিকেল পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত ডেস্কে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যকর্মী সার্বক্ষণিক উপস্থিত থেকে চীন থেকে আসা সরাসরি ৩টি ফ্লাইটসহ সন্দেহভাজন অন্যান্য ফ্লাইটের সব যাত্রীর নিবিড়ভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। প্রত্যেককেই আশকোনা হজ ক্যাম্পের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে কমপক্ষে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।

করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে লিফলেট বিতরণ এবং গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালানোর ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের সব স্থল ও নৌ ইমিগ্রেশন চেকপোস্টগুলোতে আগত যাত্রীদের যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে— এমন গুজব বা বিভ্রান্তে কান না দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়. স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর সমন্বয়ের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে ব্যাপক প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

এছাড়া বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরসমূহে কর্মরত সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার ওই প্রতিবেদনে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে পুলিশের সব হাসপাতাল, স্থাপনা. ভ্যারাক, অফিস, থানা, ফাঁড়ি, তদন্তকেন্দ্র, ক্যাম্প, শপিংমল, রান্নাঘর টয়লেট ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই