কালিগঞ্জে কেঁচো কম্পোস্টে রাজিয়ার দিনবদল

  • সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০১৬, ০৯:৪৪ এএম

সোনালীনিউজ ডেস্ক  

কেঁচো কম্পোস্টে দিন বদলেছে ঝিনাইদহের কালিগঞ্জের সংগ্রামী নারী রাজিয়ার। বাড়িতে কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে বিক্রির মাধ্যমে তার সংসার থেকে অভাব পালিয়েছে। নিজের কর্ম প্রচেষ্টায় জেলা জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু অতীতে তার অবস্থা ছিল খুব করুন। দিনমজুর স্বামী ওয়াদুদের বসতভিটের মাত্র ৬ শতক জমিই ছিল একমাত্র সম্পদ। ফলে স্বামীর সংসারে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কেটেছে তার। কিন্তু রাজিয়ার সে দিন আজ পাল্টে গেছে। 
সংগ্রামী নারী রাজিয়া বেগম জানান, বাবার অভাবের সংসারে খুব একটা লেখাপড়া করতে পারেননি। নবম শ্রেণীর পাসের পর পরিবারের সিদ্ধান্তে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় তাকে। কিন্তু দিনমজুর স্বামীর মাঠে কোন চাষযোগ্য জমি ছিল না। ফলে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কেটেছে তার। ২০০৭ সালে এমন অবস্থা যখন তার সংসারে চলছিল একদিন পাশের গ্রামের কৃষক সংগঠক হেলাল উদ্দীন তাকে কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরির পরামর্শ দেন। কয়েকদিন পরে বিনা টাকায় ৫০০ গ্রাম কেঁচোও দেন। এ থেকেই শুরু। এরপর এ কেঁচোগুলো একটি মাটির চাড়িতে গোবর দিয়ে রেখে দেন। সপ্তাহ দুয়েক পরে গোবর এক পাশ থেকে সরিয়ে দেখেন কেঁচোগুলোতে গোবর খেয়ে ছোট ছোট ফসফেটের দানার মত পায়খানা করেছে। এগুলোই কেঁচো কম্পোস্ট সার। সঙ্গে সঙ্গে কেঁচোগুলো বংশবিস্তার ঘটিয়েছে। এরপর থেকে গোবর সংগ্রহ করে চাড়ির সংখ্যা বাড়াতে থাকেন। বর্তমানে তার বাড়িতে ৩টি বড় হাউজ, ৫টি রিং ও ৮০টি মাটির চাড়িতে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। তিনি জানান নিজের কোন গরু না থাকায় প্রতি ট্রলি গোবর ৬শ’ টাকায় কিনছেন। তিনি জানান এ বছর তিনি প্রতিকেজি কেঁচো দেড় হাজার টাকা দরে এবং প্রতিমন কম্পোস্ট সার ৪শ’ টাকা দরে মোট ৮০ হাজার টাকা পেয়েছেন। বাড়ি থেকে সৃজনী সংস্থা, যশোরের কেশবপুর ও পুলির হাট থেকে পাইকারেরা এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এখনও তার বাড়িতে প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকার কেঁচো এবং কম্পোস্ট সার রয়েছে।  
তিনি আরও জানান, গত ৮ বছরের ব্যবধানে তিনি  ৬০ হাজার টাকা দিয়ে মাঠে সাড়ে তিন বিঘা জমি বর্গা নিয়েছেন। মাটির একটি ঝুপড়ি ঘর থেকে ৩ কক্ষের একটি পাকা ঘর দিয়েছেন। ৩ সন্তানের জননী। বড় ছেলে রাজু এসএসসি পাস করেছে। মেয়ে ফারজানা খাতুন উর্মি শহরের শহীদ নূর আলী কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। আর ছোট ছেলে আলী হোসেনের বয়স মাত্র ৪ বৎসর। 
কালীগঞ্জ উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এমদাদুল হক জানান, অজৈব ও রাসায়নিক সার ক্রমাগত জমিতে ব্যবহার করলে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়। সে ক্ষেত্রে জৈব সার জমিতে ব্যবহার করা হলে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তিনি জানান, রাজিয়া বেগমের কম্পোস্টের প্লান্ট তিনি দেখেছেন। তার উৎপাদিত কম্পোস্ট সার নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে অবশ্যই ভূমিকা রাখছে।  
কালীগঞ্জ উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা শারিফা আক্তার জানান, রাজিয়া বেগম স্বামীর সংসারে এসে অভাবকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। কিন্তু জীবনে সংগ্রাম করে অভাবকে আজ জয় করেছেন। তারপর জৈব সার উৎপাদন করে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখছেন। ফলে এ বছর তিনি জেলা জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন।

সোনালীনিউজ/সুজন