নতুন পে স্কেলের দাবিতে শুক্রবার সারাদেশে মানবন্ধনের ডাক

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২১, ০৫:২৯ পিএম

ঢাকা : গত দেড় মাস ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় চাপে পড়ে সরকার।

এরপর সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সাথে সভা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে সুনির্দিষ্ট কিছু পণ্যের দাম বাড়ার কারণ পর্যালোচনা করে সেটি নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

তার প্রতিফলন হিসেবে সয়ামিল রপ্তানি বন্ধ, পেয়াজের শুল্ক প্রত্যাহার এবং তেল চিনিসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যেও শুল্কও কমিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে সরকারের এসকল সিদ্ধান্ত কোন প্রভাব পড়ছেনা বাজারে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় নিন্ম গ্রেডের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এজন্য বৈষম্যহীন পে স্কেলসহ ৫ দফা দাবীতে আগামি ২২ অক্টোবর শুক্রবার সারাদেশে মানববন্ধন করবে ১১-২০ গ্রেড সরকারি চাকুরীজীবি জাতীয় ফোরাম।

তাদের দাবীগুলো হলো, দ্রæত নবম পে-কমিশন গঠন করে চলমান বেতন বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে নবম পে-স্কেল ঘোষণা ও বর্তমান বাজার ব্যবস্থা অনুযায়ী পে-স্কেল প্রদানের আগ পর্যন্ত সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা প্রদান এবং নবম পে-স্কেল বাস্তবায়ন কমিটিতে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারী প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা।

টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনঃবহালসহ বিভিন্ন দফতরে বর্তমানে প্রচলিত অসংগতিপূর্ণ নিয়োগবিধি পরিবর্তন করে শিক্ষাগত যোগ্যতা উন্নীতকরণসহ এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রণয়ন করতে হবে; ব্লকপোস্ট প্রথা বিলুপ্ত করে সকল পদে সমহারে পদোন্নতি প্রদান, আউটসোর্সিং প্রথা বাতিলসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরে ৫ বছরের অধিক সময় ধরে পরিচালিত/চলমান বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত কর্মচারীদের স্থায়ী/রাজস্বকরণ করতে হবে; সকল দফতর, অধিদফতর, পরিদফতর, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও করপোরেশনে কর্মরত কর্মচারীদের সচিবালয়ের ন্যায় পদ-পদবি ও গ্রেড প্রদান করতে হবে এবং সকল ভাতা বর্তমান বাজার চাহিদা অনুযায়ী পুনর্র্নিধারণসহ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত সকলকে ঝুঁকি ভাতা প্রদান, টেকনিক্যাল কাজে নিয়োজিত সকলকে টেকনিক্যাল স্কেল প্রদান, অতিরিক্ত কাজের জন্য ওভারটাইম ভাতা প্রদানসহ ১০০ শতাংশ পেনশন সমর্পণ ও বাংলাদেশ রেলওয়েতে প্রচলিত প্রহসনের ৫০ টাকা রেশন ভাতা বাতিল করে ১১-২০ গ্রেডের সকল কর্মচারীদের বর্তমান বাজার ব্যবস্থা অনুযায়ী রেশন প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

খোজ নিয়ে জানাগেছে, দফায় দফায় বাড়তে থাকা ব্রয়লার মুরগি শনিবার বিক্রি হয়েছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। দেড় মাসে আগেও  যা বিক্রি হয়েছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। আর ১০০ টাকা বেড়ে সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৩২০ টাকা কেজি। যদিও মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সম্প্রতি পোল্ট্রি শিল্পের মালিকদের দাবীর প্রেক্ষিতে সয়ামিল রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তার পরেও বাজারে মুরগির দামে কোন প্রভাব পড়ছেনা।

এদিকে চিনি, পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলের ওপর থেকে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এর পরে পেয়াজের দাম ১০ টাকা কমলেও অন্যান্য নিত্যপণ্যে গুলোর খুচরা বাজারে কোনো প্রভাব পড়েনি। শনিবার পেয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে যেটা বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকায়। খোলা চিনি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ এবং প্যাকেট ৮৫ টাকা। প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকা লিটার।

খুচরা ব্যবসায়ী ও ডিলারদের মতে, আমদানি ব্যয় ও প্রচলিত মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় থাকতে হবে। এটা নিশ্চিত করতে না পারলে শুল্ক প্রত্যাহার হলে শুধু লাভবান হবেন মিলমালিক ও উৎপাদনকারীরা।

জানা গেছে, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কয়েকবার বৈঠক করে ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে সরকার। প্রতিবারাই ব্যবসায়ীরা সরকারকে আশ্বস্ত করেন দাম বাড়বে না। তারা হাঁকডাক দিয়ে ভোক্তার উদ্দেশে বলেন, সরকারের নির্ধারিত দামেই তেল বিক্রি হবে। কিন্তু বাজারে চিত্র পালটায় না। ব্যবসায়ীরা যতবার বলেছেন দাম বাড়বে না, ঠিক ততবার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৪-৫ টাকা বেশিতে ভোজ্যতেল বিক্রি করেছে। ফেব্রæয়ারি মাসের পর মার্চ মাসেও দাম নির্ধারণ করে। সে সময়ও চিত্র ছিল একই।

এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভোজ্যতেলের দাম ঠিক করে দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক থেকে ব্যবসায়ীরাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে দেশের বাজারে পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য জানানো হয়।
সে অনুযায়ী খোলা এক লিটার সয়াবিন তেলে সর্বোচ্চ খুচরা দাম নির্ধারণ হয় ১২৯ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতিলিটার ১৫৩ টাকা। কিন্তু বাজারে প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকা লিটার।

আগস্টের শুরু থেকে দাম বাড়তে থাকায় ৯ সেপ্টেম্বর ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে চিনির দাম নতুন করে নির্ধারণ করে দেয় সরকার। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে দাম বেঁধে দেওয়া হয়। কয়েকটি কোম্পানির প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। সেদিন খোলাবাজারে প্রতি কেজি চিনি ৭৪ টাকা এবং প্যাকেট ৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। অথচ খোলা চিনি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ এবং প্যাকেট ৮৫ টাকা।

নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গত বুধবার থেকে আবারো রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে টিসিবির ট্রাকসেল কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু বিপুল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য যে পরিমাণ নিত্যপণ্য প্রয়োজন তা সরবরাহ করতে পারছে না টিসিবি। তাই টিসিবির ট্রাকের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন হাজার হাজার দরিদ্র মানুষ।

স্বল্প আয়ের মানুষেরা বলছেন, কম দামে পাই বলে নিয়মিত টিসিবির ট্রাকে পণ্য কিনি। কিন্তু দিনদিন ক্রেতার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। টিসিবির ট্রাক থেকে আমাদের মতো অল্প আয়ের মানুষরা বাজারের চেয়ে কম দামে তেল, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ কিনতে পারতাম। সারা বছর এটা চালু রাখলে আমরা বাঁচতে পারি। বাজারে জিনিসপত্রের দাম যে হারে বাড়ছে, ওই দামে কেনার ক্ষমতা আমাদের নেই।

সোনালীনিউজ/এমটিআই