ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হচ্ছে ২১ জেলা, ৫ মিনিটেই পদ্মা পাড়ি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২২, ০২:৩৭ পিএম

ঢাকা: ২১ জেলার ভাগ্যবদলে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায় এবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন বাঙালি জাতির স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

আর এই সেতুর কারণে অর্থনীতির দ্বার খুলছে ফরিদপুরসহ দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের। এতোদিন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলাকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল পদ্মা। উন্নয়নের সামনে যে পদ্মা এতোকাল দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেখানে বাস্তবে রূপ নিচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

উদ্বোধনের পর থেকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হচ্ছে এ অঞ্চলের ২১ জেলা। এতে করে সচল হবে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতি। গড়ে উঠবে শিল্প কলকারখানাসহ বহু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। বাড়বে মানুষের কর্মসংস্থান, কমবে বেকার সমস্যা।  

এদিকে, আগে ফেরি ও লঞ্চ ছাড়া সড়ক পথে এ অঞ্চলের মানুষ ঢাকা আসতে পারতো না। ফেরিতে আড়াই থেকে ৩ ঘণ্টা সময় ব্যয় এবং ট্রাফিক জ্যামের কারণে অনেক সময় ও অর্থ অপচয় হতো। পদ্মা সেতুর ফলে সেই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে এই অঞ্চলের সাত কোটি মানুষ। এসব জেলার সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের দুয়ার খুলে দিয়েছে স্বপ্নের এই সেতু। প্রায় সাত কোটি মানুষের প্রাণের দাবি বাস্তবায়ন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ফরিদপুরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে গোটা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের নতুনমাত্রা যোগ হবে পদ্মা সেতু চালু হলে। ইতোমধ্যেই পর্যটন কেন্দ্রে রূপ নিয়েছে সেতুর দুইপাড়।  

স্থানীরা জানান, পদ্মা সেতু দিয়ে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াত সহজ হবে, সময়ও কমবে। চলাচল সহজ করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে পদ্মা সেতু।  

সমীক্ষা অনুযায়ী, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

দুই যুগের বেশি সময় ধরে প্রমত্তা পদ্মার ওপর একটি সেতুর অপেক্ষায় ছিলেন অবহেলিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। তাইতো পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণা ঢাকা বিভাগের পাঁচ জেলাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য অন্যরকম আনন্দের। তারা বলছেন, সেতুটি চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার যে উন্নতি ঘটবে, তা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিপুল প্রসার ঘটাবে।

একটা সময় ছিল পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা থেকে সড়ক পথে রাজধানী ঢাকায় যেতে পার হতে হতো ১৫টি ফেরি। বরিশাল থেকে ঢাকা পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল ৯। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন সময়ে একের পর এক সেতু নির্মাণে এখন কেবল পদ্মা ছাড়া আর কোনো ফেরি নেই ঢাকা-কুয়াকাটা পর্যন্ত ২৮২ কিলোমিটার সড়কে।

কুয়াকাটার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কুয়াকাটা থেকে সড়কপথে ঢাকা যাওয়াটা একসময় স্বপ্ন ছিল আমাদের কাছে। পদ্মা নদী ছাড়া অন্য সব নদীতে সেতু হওয়ায় এখন ৮ থেকে সাড়ে ৮ ঘণ্টায় ঢাকা-কুয়াকাটা যাতায়াত করতে পারছি। পদ্মা সেতু চালু হলে এ সময় আরও অন্তত ৩ ঘণ্টা কমবে।’

বরিশালের রেন্ট-এ-কার চালক আনোয়ার হোসাইন বলেন, ‘বরিশাল থেকে বাংলাবাজার হয়ে ঢাকার দূরত্ব মাত্র ১৭০ কিলোমিটার। বাংলাবাজার পৌঁছতে সময় লাগে ২ ঘণ্টা। এরপর শিমুলিয়া থেকে বুড়িগঙ্গা সেতুতে পৌঁছানো যায় ৪০ মিনিটে। কেবল ফেরি চেপে পদ্মা পাড়ি দিতে গিয়ে লেগে যায় ৩-৪ ঘণ্টা। সেতু চালু হলে মাত্র ৫ মিনিটেই পদ্মা পাড়ি দিতে পারব। সেক্ষেত্রে এখন যেখানে ঢাকা যেতে সময় লাগে ৭-৮ ঘণ্টা, সেখানে ৩ ঘণ্টায় আমরা পৌঁছে যাব রাজধানীতে।’

সোনালীনিউজ/এন