এবারো শঙ্কায় চামড়া ব্যবসায়ীরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২২, ০২:১০ পিএম

ঢাকা : এবারো দেশের চামড়া ব্যবসায়ীরা কোরবানির পশুর চামড়া কেনা ও বেচা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম কিছুটা বেড়েছে। ফলে ইউরোপে বাংলাদেশ থেকে চামড়া রপ্তানি করে বেশি লাভের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারছেন না দেশীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা। লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডবি­উজি) সনদ না থাকায় এ সুযোগ নিতে পারছে না বাংলাদেশ। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লেও দেশীয় ব্যবসায়ীরা এবারো কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোরবানির গরুর প্রতিফুট চামড়ার দাম গতবছরের তুলনায় ৭ টাকা বেশি নির্ধারণ করেছে। সেই কারণে এবার দেশের বাজারেও গতবছরের তুলনায় বেশি দাম দিয়ে তাদের চামড়া কিনতে হবে। এতে ব্যয় বাড়বে। পাশাপাশি চামড়া সংরক্ষণে লাগবে লবণ। সম্প্রতি নানা পণ্যের সঙ্গে লবণের দামও বেড়েছে। চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে খরচ বেড়ে যাওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কাঁচা চামড়ার দামে। একই সঙ্গে বেড়েছে চামড়া প্রসেসিং কেমিক্যালের দাম। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

তারা বলছেন, ইউরোপে প্রতি বর্গফুট চামড়া দুই ডলার ৮০ সেন্ট দরে বিক্রি হচ্ছে। চীনে একই চামড়া ৯০ সেন্ট থেকে ১ ডলার ২০ সেন্টে দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। বাংলাদেশের চামড়া ব্যবসা মূলত চীনকে ঘিরে। সেজন্য আন্তর্জাতিক বাজারে কিছুটা দাম বাড়লেও দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়বে না। তবে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডবি­উজি) সনদ না থাকায় ইউরোপের চামড়ার বাজার ধরতে পারছে না বাংলাদেশ।

চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গরুর শরীর থেকে চামড়া খোলার পর প্রথমই লাগাতে হয় লবণ। এই লবণ লাগানো থেকে শুরু করে চামড়া ফিনিশিং পর্যন্ত ৯২ ধরনের কেমিক্যাল প্রয়োজন হয়। দেশি-বিদেশি প্রতিটি কেমিক্যালের দাম বেড়েছে। বাড়তি লবণের দামও। যে কারণে প্রতি বর্গফুট চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের খরচ ৪৮ থেকে ৫২ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা আগে ৩০ থেকে ৩২ টাকার মধ্যে ছিল। প্রতিটি গরুর চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে গড়ে ৮ কেজি লবণ লাগে। যে লবণের বস্তা (৬০ কেজি) সাড়ে চারশ টাকা ছিল, সেটা এখন ৮৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সুযোগ পেলে এ দাম আরো বাড়াতে পারে অসৎ ব্যবসায়ীরা। এসব কারণে খরচ অনেক বেড়ে গেছে।

তবে এবার চামড়ার দাম গতবছরের তুলনায় কিছুটা বাড়বে বলে ধারণা করছেন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা। সম্প্রতি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কাঁচা চামড়ার গুণগত মান ঠিক রাখা, লবণের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে এক মতবিনিময় সভায় সংগঠনের সভাপতি আফতাব খান বলেন, এবার চামড়ার দাম একটু বাড়বে। যদি লবণ ব্যবসায়ীরা কোনো সংকট তৈরি না করেন।

এদিকে বেড়েছে শ্রমিকদের পারিশ্রমিকও। এছাড়া বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা কঠিন হয়ে পড়েছে ব্যবসায়ীদের। এতে অশান্তি বেড়েছে মালিক- শ্রমিক উভয়েরই। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পণ্যমূল্য ও কাঙ্ক্ষিত মুনাফা নিয়ে প্রতিমুহূর্তে দুশ্চিন্তায় দিন কাটার মালিকরা। লোকসানের ভয়ে থাকেন তারা। অপরদিকে শ্রমিকরা কাঙ্ক্ষিত পারিশ্রমিক না পাওয়ায় তারাও থাকেন অস্বস্তিতে।

২০১৭ সালে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সরিয়ে সাভারের হেমায়েতপুরে নিয়ে যাওয়া হয় ট্যানারি শিল্প। ১৬২টি ট্যানারির মালিককে বিসিকের প্লট বরাদ্দ দেওয়া হলেও এখনো অনেকগুলো কারখানা চালু হয়নি। তবে যেসব ট্যানারি হাজারীবাগ থেকে হেমায়েতপুরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর অনেক শ্রমিক এখনো হাজারীবাগ থেকে হেমায়েতপুরে আসা-যাওয়া করে কাজ করছেন। সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর হওয়ায় শ্রমিকদের বিভিন্ন খরচ বেড়ে গেছে। সাভারে বাসা ভাড়া নিতে না পারায় অনেকেই হাজারীবাগ থেকে যাতায়াত করেন। এতে তাদের পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। অপরদিকে এসব শ্রমিককে হোটেলে খেতে হয়। এটিও তাদের বাড়তি খরচ। এসব খরচের চাপে তারা দিশেহারা।

জানা গেছে, হেমায়েতপুরে আবাসন সুবিধা না থাকায় এখনো ট্যানারিগুলোর প্রায় ২ হাজার শ্রমিক হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে গিয়ে প্রতিদিন কাজ করেন। এসব শ্রমিকের অধিকাংশের বেতন ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। পরিবার নিয়ে এখনও থাকেন ঢাকার হাজারীবাগে। সেখানে তাদের ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করে।

উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে সাভারের হেমায়েতপুরে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) চামড়া শিল্প নগরী প্রকল্প হাতে নেয়। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপির আওতায় ১৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় ব্যয় বাড়ানো হয় প্রকল্পটিতে। ২০১৭ সালে তৃতীয়বারের মতো সংশোধনী এনে ব্যয় বাড়িয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় নতুন করে অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে নতুন করে এ প্রকল্পের ব্যয় গিয়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ১৯৪ দশমিক ৪০ একর জমির ওপরে স্থাপিত সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে মোট প্লটের সংখ্যা ২০৫টি। বিসিক চামড়া শিল্প নগরীর তথ্য মতে, বিসিক চামড়া শিল্প নগরীতে ১৬২টি শিল্প ইউনিটকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে স্থাপনা নির্মাণ ও উৎপাদন কাজ চলছে ১৩৯টি শিল্প ইউনিটের।

সোনালীনিউজ/এমটিআই