দেশেই উৎপাদন হয় পেট্রল-অকটেন, তবুও কেন বাড়ল দাম?

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২২, ০২:৫৬ পিএম
সংগৃহীত ছবি

ঢাকা: বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম ব্যাপক হারে বৃদ্ধি করেছে সরকার। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪২.৫% বেড়ে হয়েছে প্রতি লিটার ১১৪ টাকা। পেট্রোলের দাম ৫১.১৬% বেড়ে প্রতি লিটারের দাম হয়েছে ১৩০ টাকা। আর অকটেনের দাম বেড়েছে ৫১.৬৮%, প্রতি লিটার কিনতে গুনতে হবে ১৩৫ টাকা।

শুক্রবার (৫ আগস্ট) মধ্যরাতের পর থেকেই নতুন এ দাম কার্যকর হয়েছে। 

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘ডিজেল আমাদের কিনতে হয়, কিন্তু অকটেন আর পেট্রল কিনতে হয় না। এটা আমরা যে গ্যাস উত্তলন করি সেখান থেকে বাই প্রোডাক্ট হিসেবে রিফাইন করা পেট্রলও পাই, অকটেনও পাই।

‘বরং যতটুকু চাহিদা তার থেকে অনেক বেশি পেট্রল এবং অকটেন কিন্তু আমাদের আছে। অনেক সময় বাইরে বিক্রিও করি।’

গত ২৭ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশে জ্বালানির মজুত নিয়ে উদ্বেগ ছড়ানো ব্যক্তিদের কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী সেদিন আরও বলেন, ‘আসলে তারা খোঁজ রাখে কি না জানিও না। হঠাৎ দেখলাম একজন জ্বালানি সংকটের কথা বলল।আসলে তারা অনেক বেশি জ্ঞানী আর তাদের ব্রেইন এতো বেশি যে, কিছু জিনিস ভুলে যান। উল্টা পাল্টা কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চান।’

এখন প্রশ্ন উঠছে, যদি নিজেদের দেশেই চাহিদার চেয়ে বেশি পেট্রল-অকটেন উৎপাদন হয় তাহলে এগুলোর দাম কেন বাড়লো?

শনিবার (৬ আগস্ট) সকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ব্যাখ্যায় সরকার বলেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সমন্বয়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) লোকসান কমানোসহ পাচার হওয়ার আশঙ্কা থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার।

জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়, এর আগে গত বছরের নভেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। সে সময় ডিজেল ও কেরোসিন লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছিল ৮০ টাকা। তার আগে এই দুই জ্বালানি তেলের দাম ছিল লিটারে ৬৫ টাকা। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার প্রবণতা থাকলেও অকটেন ও পেট্রলের দাম বাড়ায়নি সরকার। এরপর ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরুতে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমায় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যায়। 

মন্ত্রণালয় বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেল প্রতি ব্যারেল ৭৪ দশমিক শূন্য ৪ ও অকটেন ৮৪ দশমিক ৮৪ মার্কিন ডলারে নেমে এলে ডিজেল ও অকটেন প্রতি লিটার যথাক্রমে ৮০ ও ৮৯ টাকায় বিক্রি সম্ভব হতো, যা এখন প্রায় অসম্ভব। গত জুলাইয়ে ডিজেল ও অকটেনে বিপিসি প্রায় ৭৮ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে জ্বালানি তেলের দাম তুলনামূলক অনেক বেশি উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত মাসের তথ্য অনুযায়ী ভারতের কলকাতায় ডিজেল প্রতি লিটার ৯২ দশমিক ৭৬ রুপিতে (১১৮.০৯ টাকা) বিক্রি হয়। ওই সময়ের হিসাবে কলকাতার প্রতি লিটার ডিজেলের দাম বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩৪ দশমিক শূন্য ৯ টাকা বেশি ছিল। আর পেট্রলের দাম বেশি ছিল প্রতি লিটার প্রায় ৪৪ দশমিক ৪২ টাকা। এ পার্থক্যের কারণে জ্বালানি পণ্যের পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই মূল্য সমন্বয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের জ্বালানি পণ্যের মূল্যের পার্থক্যজনিত পাচার রোধ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

২৭ জুলাই দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জ্বালানি সরবরাহ ও মজুতের বিষয়ে পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, দেশে তেলের সংকট নেই। যা মজুত আছে তাতে আগামী এক মাস চলা যাবে। এছাড়াও আরও ছয় মাসের তেল অর্ডার (আমদানির আদেশ) করা আছে।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে আগামী ৩২ দিনের ডিজেল এবং ৯ দিনের অকটেন মজুত আছে। এছাড়াও ৬ মাসের তেল আমদানি নিশ্চিত করা আছে।

সোনালীনিউজ/আইএ