সরকারি কোটা সংস্কারের দাবিকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া ছাত্র-জনতার আন্দোলন একপর্যায়ে রূপ নেয় সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে। একদিকে সরকারের বলপ্রয়োগ, অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের অনড় অবস্থান—এই দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়েই পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘ সাড়ে পনেরো বছরের শাসন আমলের।
২০২৫ সালের জুলাই-অগাস্টে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থানে প্রাণহানির মাত্রা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে অভূতপূর্ব। জাতিসংঘের মতে, এ সময় প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হয়, যার মধ্যে ১২-১৩ শতাংশই শিশু। অধিকাংশের মৃত্যু ঘটে রাইফেল ও শটগানের গুলিতে। আহত হয় আরও হাজার হাজার মানুষ এবং আটক হয় ১১,৭০০ জন।
সরকারি গেজেটে নিহতের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৮৪৪ জন, যাদের ‘শহীদ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অথচ জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, নিহতের সংখ্যা প্রায় ১,৪০০। স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা এইচআরএসএস জানায়, তাদের হিসেব অনুযায়ী নিহত হয়েছে ৮৭৫ জন।
সরকারি তালিকায় মূলত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের হাতে নিহত আন্দোলনকারীদের নাম রয়েছে। অন্যদিকে জাতিসংঘের তালিকায় বিরোধী দল, সাধারণ জনগণ ও শিশুদের পাশাপাশি আন্দোলনের সময় নিহত পুলিশ ও সরকারি দলের কর্মীদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সরকারের গেজেটে বেশ কিছু অনিয়ম ধরা পড়ে। নিহতদের কারো কারো নাম একাধিকবার এসেছে। কেউ কেউ অন্য ঘটনায় নিহত হয়েও গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এমনকি জীবিত ব্যক্তিকেও ‘শহীদ’ হিসেবে দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইশরাত চৌধুরী জানিয়েছেন, "৮৪৪ জনের তালিকা থেকে ১৫-১৬ জনের নাম বাদ দেওয়া হতে পারে। তদন্ত চলছে।"
আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের তথ্যানুযায়ী, জুলাই-অগাস্ট মাসে ঢাকার রায়েরবাজার কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয় ১১৪টি মরদেহ। ধারণা করা হয়, এদের অনেকেই আন্দোলনে নিহত। তবে সরকারের গেজেটে অজ্ঞাতনামা বা বেওয়ারিশ কাউকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, “সরকারি উদ্যোগে তালিকা প্রণয়নে শৃঙ্খলার অভাব ছিল। এলাকাভিত্তিকভাবে কাজ করলে সাত দিনের বেশি লাগার কথা নয়। ক্ষতিপূরণ বা চাকরির সুযোগকে কেন্দ্র করে ভুয়া নাম ঢুকে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।”
এক বছর পার হলেও এখনো আন্দোলনে নিহতদের একটি নির্ভুল, সর্বজনগ্রাহ্য তালিকা প্রস্তুত হয়নি। ফলে শহীদদের সংখ্যা, পরিচয় ও বিচার নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে যেমন বিতর্ক রয়েছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশ সরকারের ওপর প্রশ্নবোধক চিহ্ন রয়ে গেছে।
সূত্র: বিবিসি
ওএফ