২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের পতন ঘটে। এর আগে টানা ৩৬ দিনের আন্দোলনে অসংখ্য শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ হতাহত হন। এই স্বৈরশাসনের পতনের তিন দিন পর, ৮ আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
জুলাইয়ের শহীদদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, অর্থনীতি, বিচারব্যবস্থা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং অভ্যুত্থানে নিহতদের বিচারের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
গত ৫ আগস্ট, গণজাগরণের চূড়ান্ত বিজয়ের দিনটিকে ‘গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে উদ্যাপন করে সরকার। সেদিন জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয় ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’।
‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’-এর মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা শেষে ‘জুলাই সনদ’-এর খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
৫ আগস্ট এক ঘোষণায় অধ্যাপক ইউনূস জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি পাঠাব, যাতে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে, রমজান শুরুর আগেই, জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা যায়।”
পরদিন, ৬ আগস্ট, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নির্বাচন কমিশনে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হয়। সেখানে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
প্রেস উইংয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ চিঠির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো।
পরবর্তীতে, বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন কমিশনের বৈঠক। বৈঠক শেষে কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, আগামী সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই ঘোষণা করা হবে।
সরকার ইতোমধ্যে একাধিক সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে: নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, বিচারব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন সংক্রান্ত সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন, শ্রমিক অধিকার সংস্কার কমিশন ও নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন। এসব কমিশন তাদের সুপারিশমালা জমা দিয়েছে এবং সরকার অনেক ক্ষেত্রেই সেই সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
সরকারের পদক্ষেপে ২০২৫ সালের জুন মাসে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে ৮.৪৮ শতাংশে, যা গত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। তিনি একে অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি জানান, সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই দেশের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় কৃষি উৎপাদন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ, বাজার মনিটরিং এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণের ফলে বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে রমজান মাস থেকে বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় আছে।
তিনি আরও বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের আস্থা ও সহায়তায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। গত অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ৩০৩৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা রপ্তানি আয়ে প্রায় ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এনেছে। ফলে টাকার মানও ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী হয়েছে।
তিনি জানান, গত ১১ মাসে বৈদেশিক ঋণদাতাদের কাছে ৪ বিলিয়ন ডলারের সুদ ও মূলধন পরিশোধ করা হয়েছে—যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর পরও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েই চলেছে।
ওএফ