জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর সংশোধন দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির মতে, নতুন এই অধ্যাদেশ কমিশনের স্বাধীন ও কার্যকর কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এবং এতে বৈষম্যমূলক কাঠামো বজায় থাকবে।
রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কমিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অকার্যকর অবস্থায় আছে। যদিও অংশীজনদের দেওয়া কিছু প্রস্তাব অনুমোদিত খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি, তবু কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী উপেক্ষিত হওয়ায় কমিশনের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
৩১ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুমোদন দেয়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল কমিশনকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করা।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সাত সদস্যের মধ্যে দুজনকে খণ্ডকালীন রাখার বিধান বৈষম্যমূলক। এতে সদস্যদের মর্যাদা ও এখতিয়ারে বৈষম্য তৈরি হবে, যা কমিশনের অকার্যকারিতার অন্যতম কারণ হতে পারে। তাই সব সদস্যের পদমর্যাদা ও সুবিধায় সমতা আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, চেয়ারম্যান ও কমিশনার বাছাই প্রক্রিয়া যেন স্বচ্ছ হয়, সে জন্য প্রাথমিকভাবে মনোনীত প্রার্থীদের নাম প্রকাশের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল—কিন্তু তা গ্রহণ করা হয়নি। একইভাবে, আইনবহির্ভূত আটক স্থান বন্ধ করা ও দায়ীদের জবাবদিহির বিষয়েও প্রস্তাব উপেক্ষিত হয়েছে, যা টিআইবির মতে হতাশাজনক।
টিআইবি আরও মনে করে, কোনো আইন মানবাধিকার পরিপন্থি হলে কমিশনের উচিত ছিল তা পর্যালোচনা ও সংশোধনের সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকা। পাশাপাশি ধারা ১৪–এ এই আইনকে মানবাধিকার সম্পর্কিত অন্যান্য আইনের ওপর প্রাধান্য দিলে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে কমিশনের অবস্থান আরও শক্তিশালী হতো।
বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, অধ্যাদেশে সব অভিযোগে প্রাথমিক অনুসন্ধান বাধ্যতামূলক রাখায় তদন্ত প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘ হবে। এতে ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচারের পথে আরও বাধার মুখে পড়বেন।
টিআইবি উদ্বেগ জানিয়ে বলে, কমিশনে প্রেষণে নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তার সংখ্যা সর্বোচ্চ ১০ শতাংশে সীমিত রাখা, প্রেষণে কমিশনের মতামত বাধ্যতামূলক করা এবং এসব পদে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশগুলোও বিবেচনা করা হয়নি।
সংস্থাটি আরও প্রস্তাব করে, কমিশনের বার্ষিক আর্থিক নিরীক্ষা শেষে প্রতিবেদনটি ওয়েবসাইটে প্রকাশের বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত, যাতে প্রতিষ্ঠানটির জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা আরও সুদৃঢ় হয়।
বিবৃতির শেষে টিআইবি বলে, গ্লোবাল অ্যাসোসিয়েশন অব ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ইনস্টিটিউশনসের মানদণ্ড অনুসারে কমিশনকে স্বাধীন, কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে দ্রুত অধ্যাদেশটি সংশোধন করা প্রয়োজন।
এম