ঢাকা: জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং গণভোট বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোকে পরস্পরের মধ্যে আলোচনা করে সাত দিনের মধ্যে সরকারকে জানাতে বলা হয়েছিল। সোমবার (৩ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতার আহবান জানানো হয়। চার দিনে অতিক্রম করলেও দলগুলোর মধ্যে তেমন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। তবে সরকার জানিয়ে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো যদি কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারে তবে সরকার নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিবে।
জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলো দাবি আদায়ে রাজপথে শক্তি প্রদর্শন করছে। এ অবস্থায় সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সংকট নিরসনে সমঝোতার উদ্যোগ নিলেও আশার আলো দেখছেন না গণতন্ত্র মঞ্চসহ ৯ দলের নেতারা।
জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে গত সোমবার অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতার আহবান জানানো হয়। বিশেষ করে গণভোট কখন হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমতগুলো প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে ‘জরুরি ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত’ গ্রহণের জন্য বলা হয়।
এ জন্য এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হলেও সমঝোতার বিষয়ে কোনো উদ্যোগের কথা জানানো হয়নি। তবে একটি ‘সমঝোতামূলক রূপরেখা’ তৈরি করতে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করলেও জামায়াতে ইসলামী রাজপথে শক্তি প্রদর্শনকে গুরুত্ব দিচ্ছে। জামায়াতসহ আটটি ইসলামী দলের পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার যমুনা অভিমুখে মিছিল এবং প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
তারা আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সরকার দাবি বাস্তবায়ন না করলে ১১ নভেম্বর সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি ও গণভোটের সময় নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার উদ্যোগ নিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চভুক্ত ছয়টি দল, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ ও এবি পার্টি। গত বুধবার রাজধানীর পল্টনে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কার্যালয়ে এই ৯টি দলের এক জরুরি সভায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আলোচনার কথা জানান দলগুলোর নেতারা। এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থানে কোনো আশার আলো দেখছেন না তাঁরা। বরং ভবিষ্যতে সংকট আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট ইস্যুতে মুখোমুখি অবস্থানে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফোন করে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য গতকাল দলের স্থায়ী কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত খুব পরিষ্কারভাবে আপনাদেরকে জানিয়ে দিয়েছি। ওটাই আমাদের বক্তব্যে।
সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, আইন মন্ত্রণালয় ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ’ প্রণয়নে কাজ শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহে এই কাজ সম্পন্ন হতে পারে। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে ‘আন-অফিশিয়ালি’ কিছু সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে, যা আগামী সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে প্রশ্ন করা হয়, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলো সাড়া না দিলে সরকার কী করবে? জবাবে তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সে বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক অনেক মিটিং হচ্ছে। তবে আমরা আশা করব, পলিটিক্যাল পার্টিগুলো আলাপ-আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে আসবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘গোটা জাতি এখন নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। নির্বাচনের স্টেজ তৈরি হয়েছে। জাতি যেন খুব দ্রুতই নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে পারে, সে ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নেবে।’
পিএস