ঢাকায় ছোট কম্পনেও বড় বিপদের ইঙ্গিত, যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২৫, ০৩:৫৪ পিএম
ফাইল ছবি

ঢাকার স্থাপনা ও নগরায়ণ প্রকৃতির কারণে রাজধানী শহরের জন্য ভূমিকম্পের ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হয়েছে। ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞরা বলছেন, উৎপত্তিস্থলের নৈকট্য, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জনঘনত্ব এবং নির্মাণ মানদণ্ড না মেনে ভবন নির্মাণ এই ঝুঁকিকে তীব্র করেছে।

গত শুক্র ও শনিবার প্রায় ৩১ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা ও আশপাশে চারটি ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকালে নরসিংদীর মাধবদী থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎস ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। তীব্র ঝাঁকুনি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনুভূত হয়। এতে শিশুসহ ১০ জন নিহত ও ৬ শতাধিক আহত হন।

ভূ-অভ্যন্তরের ফাটল বা ফল্ট লাইনগুলো এতদিন প্রচণ্ড চাপে আটকে থাকলেও এখন নড়তে শুরু করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান আফটার শকগুলো বড় ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা দিচ্ছে। অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলেন, সাবডাকশন জোনে জমে থাকা শক্তির মাত্র ১ শতাংশের কম নির্গত হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে আরও বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা উন্মুক্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাকিব হাসান চারটি কারণে ঢাকার বিপদের কারণ ব্যাখ্যা করেন। উৎপত্তিস্থলের নৈকট্য, মাটি ভরাট করে গড়া নতুন এলাকা, ভবন নির্মাণ বিধি অমান্য এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব। এ কারণে কম্পনের ক্ষয়ক্ষতি আরও বেশি হবে।

গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ৩৯টি ভূমিকম্পের মধ্যে ১১টির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার ৮৬ কিলোমিটারের মধ্যে। ভূমিকম্পের বেশির ভাগ রাতের সময়ে হওয়ায় প্রাণহানির ঝুঁকি বেশি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৬ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত পাঁচ বছরে ঢাকার নিকটবর্তী ১৮ জেলায় ভূমিকম্প রেকর্ড হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নানা প্রস্তুতি নেওয়া হলেও তা যথেষ্ট নয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান জানান, সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং স্বেচ্ছাসেবক ও সশস্ত্র বাহিনীকে যুক্ত করে মানুষকে সচেতন করা হবে। তবে দুর্যোগ ফোরামের গওহর নঈম ওয়ারা মনে করেন, স্থানীয় সরকারের অংশগ্রহণ ছাড়া কার্যকর ব্যবস্থা সম্ভব নয়।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ঢাকা শহরের জন্য যে ঝুঁকি এসেছে, তা বাস্তব এবং অবহেলা করা যাবে না। ছোট কম্পনগুলোই ভবিষ্যতের বড় ভূমিকম্পের পথপ্রদর্শক।

এসএইচ