পে-স্কেল নিয়ে সম্ভাব্য দুই পথ, জানা গেল সর্বশেষ তথ্য

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২৫, ০৮:৫২ এএম

নতুন নবম জাতীয় বেতন স্কেল নিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের দীর্ঘ অপেক্ষা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। একদিকে কর্মচারী সংগঠনগুলো দ্রুত চূড়ান্ত গেজেট জারি করে বেতন কাঠামো কার্যকরের দাবি জানাচ্ছে, অন্যদিকে সরকার বাজেট সক্ষমতা ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রভাব বিবেচনায় সময় নেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ফলে নবম পে-স্কেল ঘিরে এখন দুইটি সম্ভাব্য পথই আলোচনার কেন্দ্রে।

সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলো ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের আল্টিমেটাম দিয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণাও এসেছে। এ অবস্থায় প্রশাসন ও অর্থ বিভাগের মধ্যে তৎপরতা বাড়লেও নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়নের আর্থিক চাপ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরকারি সূত্র ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নবম পে-স্কেল পুরোপুরি কার্যকর হলে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে। এতে উন্নয়ন ব্যয় পুনর্বিন্যাস, রাজস্ব ঘাটতি এবং মুদ্রাস্ফীতির ওপর চাপ তৈরি হতে পারে। এ কারণেই সরকার ধাপে ধাপে বা আংশিক বাস্তবায়নের বিকল্প ভাবছে—একসঙ্গে পুরো প্যাকেজ নয়, বরং পর্যায়ক্রমে কার্যকর করার পরিকল্পনাও আলোচনায় রয়েছে।

এদিকে কর্মচারী সংগঠনগুলো প্রস্তাবিত গ্রেড কাঠামো, ন্যূনতম ও সর্বোচ্চ বেতনের অনুপাত এবং পেনশন-ভাতা সংস্কারের দাবি জানিয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে ১:৪ অনুপাত, সর্বনিম্ন বেতন প্রায় ৩৫ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার সম্ভাব্য কাঠামোর কথা শোনা গেলেও এগুলো এখনো চূড়ান্ত নয়। সরকারি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত এসব তথ্য অনুমান হিসেবেই থাকছে।

সম্ভাব্য দুই পথ

এক. দ্রুত গেজেট ও ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর
যদি সরকার প্রশাসনিক সমন্বয় ও বাজেট পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয় এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করে, তাহলে নবম পে-স্কেল ১ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে কার্যকর হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের বাজেট সমন্বয় প্রয়োজন হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

দুই. নির্বাচন পরবর্তী সরকারের ওপর সিদ্ধান্ত ন্যস্ত
অন্যদিকে অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট পরিস্থিতি বিবেচনায় গেজেট জারি বিলম্বিত হলে বা বাস্তবায়ন স্থগিত থাকলে বিষয়টি পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের হাতে চলে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ২০২৬ সালের শুরুতে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।

নবম পে-স্কেল দ্রুত কার্যকর হলে যেমন অর্থনীতিতে চাপ বাড়তে পারে, তেমনি দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হলে সরকারি কর্মচারীদের অসন্তোষ, আন্দোলন কিংবা প্রশাসনিক অচলাবস্থার ঝুঁকিও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই দ্বৈত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের জন্য প্রয়োজন স্বচ্ছ আর্থিক হিসাব, বাস্তবসম্মত ধাপে বাস্তবায়ন পরিকল্পনা এবং কর্মচারী সংগঠনগুলোর সঙ্গে কার্যকর সংলাপ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যয় ও রাজস্বের স্পষ্ট হিসাব প্রকাশ করে সময়ভিত্তিক রোডম্যাপ ঘোষণা করা হলে অনিশ্চয়তা অনেকটাই কমবে। একই সঙ্গে চূড়ান্ত গেজেটের ভাষা ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত নোটিফিকেশনই নির্ধারণ করবে নবম পে-স্কেলের ভবিষ্যৎ পথ।

বর্তমান বাস্তবতায় বলা যায়—সময়ের মধ্যে গেজেট জারি হলে নবম পে-স্কেল ২০২৬ সালের শুরু থেকেই কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর তা না হলে সিদ্ধান্ত চলে যেতে পারে পরবর্তী সরকারের কাঁধে। স্বচ্ছতা ও সমঝোতা ছাড়া এই প্রক্রিয়ায় কোনো পক্ষেরই পুরোপুরি সন্তুষ্ট হওয়া কঠিন।

এম