ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির জানাজা শুরু হতে তখনও প্রায় দুই ঘণ্টা বাকি। অথচ সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামতে থাকে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায়। স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
আজ শনিবার দুপুর ২টায় হাদির জানাজার সময় নির্ধারিত। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মানিক মিয়া এভিনিউ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। নানা জেলা থেকে হাজারো মানুষ দলে দলে আসতে থাকেন। কেউ আসছেন মিছিল নিয়ে, কেউ আবার নীরবে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন শেষ বিদায়ের মুহূর্তের।
জড়ো হওয়া মানুষের মুখে মুখে একই স্লোগান। আমরা সবাই হাদি হবো, যুগে যুগে লড়ে যাবো। আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই। তুমি কে আমি কে, হাদি হাদি। স্লোগানের গর্জনে মুহূর্তে মুহূর্তে কেঁপে উঠছে আশপাশের এলাকা।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক হাদির জানাজায় অংশ নিতে নারায়ণগঞ্জ থেকে সকালে এসেছেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, হাদিকে গুলি করার খবর শোনার পর থেকে রাতে ঘুমাতে পারছি না। জানাজায় শরিক হতে পেরে একটু শান্তি পাব ভেবেই এসেছি। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন।
ঢাকার বাইরে থেকে আসা অয়ন চৌধুরী বলেন, হাদির আগে আল্লাহ আমাকে নিল না কেন। এই দেশে তার মতো মানুষের প্রয়োজন ছিল আরও অনেক বেশি।
জানাজায় শরিক হতে আগেভাগেই অজু করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন মুসল্লিরা। কেউ সিটি করপোরেশনের রাখা পানিতে, কেউ নিজের সঙ্গে আনা পানিতে পবিত্রতা অর্জন করছেন। চারপাশজুড়ে দেখা যাচ্ছে শোক আর ক্ষোভের মিশ্র আবহ।
মানিক মিয়া এভিনিউয়ের বিভিন্ন প্রবেশপথে খেজুর তলা এলাকায় বাঁশের ব্যারিকেড বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তল্লাশি শেষে সবাইকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। জনস্রোত সামলাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হিমশিম খেতে দেখা যায়।
শেষ বিদায়ের ক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে, ততই ভারী হয়ে উঠছে পরিবেশ। স্লোগান, চোখের জল আর নীরব অপেক্ষায় মানিক মিয়া এভিনিউ যেন রূপ নিয়েছে এক শোকস্তব্ধ প্রতিবাদের মঞ্চে।
এসএইচ