মহান স্বাধীনতা দিবস আজ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০১৯, ১০:৫৭ পিএম

ঢাকা: মহান স্বাধীনতা আজ। দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার ৪৮তম বার্ষিকী। ১৯৭১-এর এদিন থেকে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয়েছিল মহান বিজয়। বিশ্ব মানচিত্রে ঠাঁই করে নেয় বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডটি। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্জন এই স্বাধীনতা।

দীর্ঘকালের পরাধীনতার শৃংখল, শোষণ-বঞ্চনা, অত্যাচার-অনাচারের নাগপাশ ছিন্ন করতে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ এ জনপদে জ্বলে উঠেছিল স্বাধীনতার অনির্বাণ শিখা।

একাত্তরের মার্চ মাস শুরু হতেই স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতি শুরু করে আন্দোলন সংগ্রাম। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণা, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’, দেশজুড়ে বিক্ষোভ, উত্তাল রাজপথ, পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যার মধ্য দিয়ে চলতে থাকে একেকটি দিন। মুক্তিকামী মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বাণে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকেন। সারাদেশে বেজে ওঠে রণদামামা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে অতর্কিতে নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।

ঢাকাসহ দেশের শহরগুলোতে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণা টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টার ও তৎকালীন ইপিআর-এর ওয়ারলেসের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এই ঘোষণা প্রচারিত হয়। জাতির পিতার নির্দেশে পরিচালিত ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি পালনে সশস্ত্র বাহিনী, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শোভাযাত্রা, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে তেজগাঁও পুরোনো বিমানবন্দর এলাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা করা হয়েছে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধারা, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ জনগণ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

দিনটি উপলক্ষে সকল সরকারি-আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনা আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করছে। ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন বাহিনীর বাদক দল বাদ্য বাজাবেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত নাট্যমঞ্চ (অ্যাম্পিথিয়েটার) থেকে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এবং সদরঘাট থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত নৌপথে বিশিষ্ট শিল্পীগণের অংশগ্রহণে দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশিত হবে।

এদিকে, স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হবে। এসময় সারাদেশে একযোগে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হবে। বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে সম্ভব হলে বাংলাদেশের সাথে একই সময়ে এবং অন্যান্যরা একই দিনে সুবিধাজনক সময়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন কর্মসূচি পালন করবে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে। এছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবে।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে। দেশের সকল হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু পরিবার, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে প্রতিষ্ঠান ও শিশুদিবা যত্ন কেন্দ্রসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সকল শিশুপার্ক ও জাদুঘরসমূহ বিনা টিকিটে উন্মুক্ত রাখা হবে। চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা ও পায়রা বন্দর এবং ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জের পাগলা, বরিশাল ও চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজসমূহ বিকাল ২টা হতে ঐদিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশুকিশোর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দেশের সকল বিভাগ, জেলা ও উপজেলা সদরে সকালে কুচকাওয়াজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবেশ, জাতীয় সংগীত পরিবেশন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে অনুরূপ কর্মসূচি পালন করবে।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম