ঢাকা : জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বাধীনতাযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করছে বাঙালি জাতি। সর্বস্তরের জনতার পুষ্পাঞ্জলিতে ভরে উঠছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) ভোর ৬টার দিকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় স্মৃতিসৌধে। পরে প্রধানমন্ত্রী তার দল আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর পর বীরশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা, ভাষাসৈনিক, বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানরা।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ এলাকা ছেড়ে গেলে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরের জনতার জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
এরপরই স্মৃতিসৌধে জনতার ঢল নামে মানুষের। ফুল নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তরুণ-তরুণী, প্রবীণদের পাশাপাশি অনেক শিশুকেও দেখা যায় অভিভাবকের আঙুল ধরে বা কাঁধে চড়ে স্মৃতিসৌধে আসতে।
সকাল ৭টা পর্যন্ত স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারবর্গ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ঢাকা জেলা পুলিশ, বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, জাবি কর্মকর্তা সমিতি ও বিভিন্ন হল এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জেএসডি), রাজউক, জাতীয় পার্টি, শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মহিলা ক্লাব, সিআরপি, সিডাব ও বিকল্প ধারা বাংলাদেশ প্রভৃতি সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে ‘গৌরবময় স্বাধীনত’ : সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গৌরবময় স্বাধীনতা চত্বরে কমিউনিটি পুলিশিং সেল, ঢাকা জেলার উদ্যোগে ‘গৌরবময় স্বাধীনতা ২০১৯’ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই.. গানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রথমে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ওপর তৈরি করা বিশেষ তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর কবিতা আবৃত্তি, দলীয় নৃত্য এবং সংগীত পরিবেশিত হয়। ঝুমুর একাডেমিসহ স্থানীয় শিল্পীরা এতে অংশ নেন।
শিল্পীদের গাওয়া ‘ঢেউ হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবো রে, তোমার ভয় নেই মা আমরা, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ গান সকলকে আবেগ আপ্লুত করে।
স্মৃতির মিনারে স্মৃতির ছবি প্রদর্শনী : স্মৃতির মিনারে প্রদর্শনী হলো ১৯৭১ সালের স্মৃতি বিচরিত সেই ছবি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি নর হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, শোষণ ও বাঙালি উপর অমানুষিক নির্যাতনের চিত্র গুলোই ফুটিয়ে তুলা হয় প্রদশর্নীতে। মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে চিত্র প্রর্দশনীর আয়োজন করে ঢাকা জেলা পুলিশ।
স্মৃতি বিচরিত ছবি গুলোকে সংরক্ষণ করে সাধারণ জনগণের কাছে তুলে ধরা হয়। উন্মুক্ত মঞ্চের পাশে ছবি প্রর্দশন করা হয়। এতে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা হাজারো লোকের দৃষ্টি নন্দিত হয় ছবি গুলো।
সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী মোহনা জানান, আজকে এই বিশেষ প্রদশর্নীর মাধ্যমে ১৯৭১ সালে চিত্র গুলোকে নিজে চোখে দেখতে পেলাম । বঙ্গবন্ধু দেশের প্রতি অমলিন ভালোবাসার প্রতিছবি ও মুক্তিযোদ্ধাদের দুঃসাহসীকতার জয়ের রূপ রেখায় প্রদশর্নীতে মন কেড়েছে বলে জানান তিনি।
অপর দিকে শ্রদ্ধা জানাতে আসা প্রবীণ মিরাজ উদ্দিন দৈনিক জাগরণকে জানান, ১৯৭১ সালের ভয়ানক সেই দিন গুলো নিজে দেখেছি। এরকম ভাবে স্মৃতিময় ছবিগুলো প্রদশর্নের মাধ্যমে নবীণদের জাগরণ ও দেশের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করতে হবে বলে জানান তিনি ।
সোনালীনিউজ/এমটিআই