পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন

দেশে তামাকসেবী ৩ কোটি ৭৮ লাখ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২০, ২০১৯, ০২:০৭ পিএম

ঢাকা : তামাকপণ্য সেবনে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও ফুসফুসে ক্যান্সার হতে পারে বলে মনে করেন দেশের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ মানুষ।

গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিজ্ঞাপন দেখে থাকে জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক। এর পরও দেশের প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষের ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ তামাক সেবন করে থাকেন। পুরুষদের ৪৬ শতাংশই সিগারেট, বিড়ি, জর্দা বা অন্য কোনো তামাকজাত পণ্য সেবন করছেন। নারীদের ক্ষেত্রে এ হার ২৫ দশমিক ২০ শতাংশ। এ খাতে বছরে ব্যয় হচ্ছে ১৭ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। বছরে তামাকের চাহিদা বাড়ছে প্রায় ১৪ শতাংশ হারে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে শীর্ষক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রাপ্তবয়ষ্ক ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাকসেবী। জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ১৮ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপানের নেশায় আসক্ত। সংখ্যার বিচারে প্রাপ্তবয়ষ্ক ধূমপায়ী ১ কোটি ৯২ লাখ। পুরুষদের ৩৬ শতাংশ ও নারীদের দশমিক ৮ শতাংশ ধূমপানে আসক্ত। এর মধ্যে দেড় কোটি প্রাপ্তবয়ষ্ক সিগারেট সেবন করে থাকেন। অবশিষ্ট ৫৩ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক বিড়ির নেশায় আসক্ত।

ধোঁয়াযুক্ত তামাক তথা ধূমপানে পুরুষরা এগিয়ে থাকলেও ধোঁয়াবিহীন তামাকে দেশের নারীরাই এগিয়ে আছে বলে প্রতিবেদনটিতে উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, দেশের ২০ দশমিক ৬০ শতাংশ প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করে থাকেন। সংখ্যার বিচারে অধূমপায়ী তামাক গ্রহীতা ২ কোটি ২০ লাখ। পুরুষদের ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ ও নারীদের ২৪ দশমিক ৮০ শতাংশই ধোঁয়াবিহীন তামাকসেবী।

এ বিষয়ে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোল্লা ওবায়দুল্লাহ বাকী বলেন, ক্যান্সার রোগের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম তামাক সেবন। এ ছাড়াও তামাকের কারণে বেশ কিছু জটিল রোগের সৃষ্টি হতে পারে। ধূমপান প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ আরো জোরদার করতে হবে। এছাড়া এ সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে প্রয়োগেরও পরামর্শ দিয়েছেন এ ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ।

তামাকসেবীদের বড় একটা অংশ নেশা ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে দাবি করেছে বিবিএস। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে ধূমপান করছেন এমন প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষের ৬৬ দশমিক ২০ শতাংশ মানুষ গত এক বছরে ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা করেছেন। তামাকসেবীদের মধ্যে ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন ৫১ দশমিক ৩০ শতাংশ।

সিগারেটসেবীরা প্রত্যেকে এ খাতে প্রতি মাসে গড়ে ১ হাজার ৭৭ টাকা ৭০ পয়সা ব্যয় করছেন বলে উঠে এসেছে প্রতিবেদনটিতে। আর বিড়িসেবীদের এ খাতে জনপ্রতি মাসিক ব্যয় ৩৪২ টাকা। নেশাদ্রব্য কেনায় টাকা ব্যয়ের পাশাপাশি তামাকসেবীদের চিকিৎসা খাতেও অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। ধূমপায়ীদের ৬৫ দশমিক ৮০ শতাংশ ও অধূমপায়ী তামাকসেবীদের প্রায় ৫৭ শতাংশ এ সংক্রান্ত জটিলতায় গত এক বছরের মধ্যে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রাক্কলন প্রতিবেদনে বিবিএস জানিয়েছে, গত বছর তামাক সেবনে বাংলাদেশে মোট ব্যয় হয়েছে ১৭ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। মোট অভ্যন্তরীণ ভোগের দশমিক ৭৮ শতাংশই ব্যয় হয়েছে তামাক খাতে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তামাক খাতে মোট ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছর এ খাতে চাহিদা ৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ বাড়লেও পরের অর্থবছর চাহিদা বাড়ে ১২ দশমিক ১৮ শতাংশ। গত অর্থবছরে তামাকের চাহিদা বাড়ে ১৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই