ঢাকার যেসব আসনে চূড়ান্ত বিএনপির প্রার্থী তালিকা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২৫, ০২:৫২ পিএম
ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এখন এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক তফসিল ঘোষণার আগেই দলটি মনোনয়ন প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছে গেছে। পুরো প্রক্রিয়াটি সরাসরি তত্ত্বাবধান করছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

দলীয় সূত্র বলছে, লন্ডন থেকে প্রতিদিনই একের পর এক ফোন কল যাচ্ছে দেশের সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাছে। এই ফোন কলই এখন ‘গ্রিন সিগন্যাল’- মানে, কে থাকছেন নির্বাচনী দৌড়ে, আর কে বাদ পড়ছেন, সেটি নির্ধারণ করে দিচ্ছে একমাত্র এই কল।

[259268]

দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমান ব্যক্তিগতভাবে প্রতিটি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীর সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন। কার মাঠে উপস্থিতি কেমন, সাংগঠনিক অবস্থান ও জনপ্রিয়তা কোথায়— সব কিছু তিনি খতিয়ে দেখছেন নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে।

একজন জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আগের মতো এবার শুধু সিনিয়রিটি নয়, মাঠের জনপ্রিয়তাই মূল মানদণ্ড। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিটি আসনের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আছে। যারা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য, তারাই পাচ্ছেন ফোন।’

রাজধানী ঢাকায় ইতিমধ্যে কয়েকটি আসনের প্রার্থীরা ফোন পেয়েছেন। তাদের কেউ কেউ প্রচারণার প্রস্তুতিও শুরু করেছেন। জানা গেছে, এবার ঢাকার আসনগুলোতে তরুণ, পেশাজীবী এবং নতুন প্রজন্মের মুখকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে— তরুণ ভোটারদের টানতেই এই কৌশল।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা–৩-এ গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা–৪-এ তানভীর আহমেদ রবিন, ঢাকা–৬-এ ইশরাক হোসেন, ঢাকা–৮-এ মির্জা আব্বাস, ঢাকা–১০-এ ব্যারিস্টার নাছির উদ্দিন আহমেদ অসীম, ঢাকা–১২-এ নবী সোহেল, ঢাকা–১৩-এ এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ঢাকা–১৫-এ মামুন হাসান এবং ঢাকা–১৬-এ আমিনুল হক গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন।

[259024]

সবচেয়ে আলোচিত নাম ঢাকা–১৪ আসনের ‘মায়ের ডাক’ আন্দোলনের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম তুলি। গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন তুলিকে নিজেই ফোন করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন তারেক রহমান।

অন্যদিকে ঢাকা–১৭ আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)-এর সভাপতি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থকে। জোট রাজনীতিতে বিএনপির নমনীয়তা ও সমন্বয়ের ইঙ্গিত হিসেবেই দেখছেন পর্যবেক্ষকরা।

রাজধানীর বাইরে বিএনপির ‘নির্ভার আসন’ অন্তত ৬০টি। এসব আসনে প্রার্থী নিয়ে কোনো মতভেদ নেই। ঠাকুরগাঁও–১-এ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কুমিল্লা–১-এ ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নরসিংদী–২-এ ড. আবদুল মঈন খানসহ শীর্ষ নেতারা এসব আসনে প্রার্থী হচ্ছেন।

গত ১৯ অক্টোবর সিলেট বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে প্রার্থীদের মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতি ও সংগঠনগত নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর আগে একইভাবে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, ‘এই মাসের মধ্যেই দুই শতাধিক আসনে প্রার্থীদের গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হবে। আমরা শেষ ধাপে আছি।’

দলীয় নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যিনি চূড়ান্ত মনোনয়ন পাবেন, সবাইকে তার পক্ষেই কাজ করতে হবে। অভ্যন্তরীণ বিরোধে যুক্ত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধান বিএনপির মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় এক নতুন মাত্রা এনেছে। এতে যেমন প্রার্থীদের বাছাইয়ে স্বচ্ছতা বাড়ছে, তেমনি তরুণ ও যোগ্য নেতৃত্বও উঠে আসছে সামনে।

একজন বিশ্লেষক বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর বিএনপি মাঠের বাস্তবতা বিচার করে প্রার্থী নির্বাচন করছে— এটা দলের জন্য ইতিবাচক সংকেত।’

এসএইচ