যেসব কারণে ক্ষমতায় আসতে পারে জামায়াত

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৫, ০৪:০৫ পিএম
ফাইল ছবি

স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার আমলে যে দলগুলো সবচেয়ে বেশি দমন–পীড়নের মুখে পড়েছিল, তাদের মধ্যে শীর্ষে থাকবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নিষেধাজ্ঞা, গ্রেপ্তার, গুম ও রাজনৈতিক নিষ্ঠুরতার দীর্ঘ ছায়া পেরিয়ে দলটি এখন নতুন এক বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে। গেল বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগের পতনের পর সেই অন্ধকার অধ্যায় থেকে বেরিয়ে এসে জামায়াত যেন আবারও ফিরে পেয়েছে রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা ও জনসম্পৃক্ততা। নতুন নেতৃত্ব, নীতি ও সংগঠনের রূপান্তরের মধ্য দিয়ে দলটি এখন শুধু ইসলামপন্থী ভোটার নয়, বরং মধ্যবিত্ত, তরুণ ও নারী সমাজের মাঝেও জায়গা করে নিতে শুরু করেছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন,পরিবর্তিত সময়, নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব এবং বাস্তবমুখী রাজনৈতিক কৌশলের কারণে আসন্ন নির্বাচনের অঙ্কে জামায়াত এবার এক গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠতে পারে। ইসলামী জোটের কারণে বিএনপিকে টেক্কা দিয়ে বাগিয়ে নিতে পারে ক্ষমতাও।

ইসলামী দল বা জামায়াত ক্ষমতায় আসলে নারীদের চলাচল বা স্বাধীনতা হরণ হবে এমন কথা ছড়িয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। যদিও দলটি নারী ভোট ব্যাংক বাড়াতে বিশেষভাবে কাজ করছে। কর্মজীবী নারীদের জন্য স্বস্তিকর পরিবেশ, নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা ও সামাজিক নিরাপত্তার আশ্বাস দিচ্ছে তারা। পাশাপাশি পর্দা ইস্যুতে কঠোর অবস্থান না নিয়ে বাস্তবমুখী ও সহনশীল দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলছে জামায়াত।

ইতোপূর্বে ক্ষমতায় গেলে নারীদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, ‘আমাদের বদনাম দেওয়া হয় যে, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নাকি নারীদের ঘরে তালা দিয়ে রাখবে। কিন্তু এত তালা কেনার টাকা কোথায়?’

বর্তমান সময়ে জামায়াতের উপর দেশের মানুষের আস্থা বাড়ছে। তাদের দারুণ সব কার্যক্রম এবং সামাজিক বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে মানুষের ভিতরে আস্থা তৈরি করেছে দলটি। সারাদেশে নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলা এবং দলীয় নির্দেশনায় শান্তি বজায় রাখতে ৫ আগস্টের পর থেকে সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখায় মানুষ আস্থায় নিয়েছে- ফলাফল হয়তো পাওয়া যাবে জাতীয় নির্বাচনে। 

রাজনৈতিক পরিবর্তনের আরেকটি দিক হলো সংখ্যালঘু ভোটারদের প্রতি নতুন বার্তা। দলটি বলছে, নীতিতে পরিবর্তন এসেছে, হিন্দু নাগরিকদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এই অবস্থান যদি বিশ্বাসযোগ্য হয়, তবে হিন্দু ভোটারদের একটি অংশও এবার জামায়াতের দিকে ঝুঁকতে পারে।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজে ঐক্যের আহ্বানও জামায়াতের রাজনৈতিক কৌশলের কেন্দ্রে। ইসলামী জোটগুলোর সঙ্গে সমন্বয় এবং মুসলিম ভোট বিভাজন ঠেকাতে ঐক্যের বার্তা দিয়ে তারা একটি বৃহৎ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চায়।

দলটির অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও প্রার্থীদের আচরণও ইতিবাচক আলোচনায় এসেছে। প্রার্থীদের নম্রতা, মাঠের শৃঙ্খলাবোধ এবং দলীয় কাঠামোর ঐক্য অনেক ভোটারের কাছে জামায়াতকে “গোছানো ও সংগঠিত দল” হিসেবে উপস্থাপন করছে। তাছাড়া দেশের বড় সংখ্যাক মানুষ এখন ভুগছে চাদাবাজিসহ নানান সমস্যা মহামারি আকার ধারণ করেছে। তবে এসব থেকে অনেকটা দুরে রয়েছে এই দলটি- যা মানুষের মাঝে দারুণভাবে সাড়া ফেলেছে। এবারের নিরব ব্যালোট বিপ্লব ঘটাতে পারে জামায়াতসহ ৮ দলীয় জোট।

বেকারত্ব, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি দূর করার প্রতিশ্রুতি জামায়াতের নির্বাচনী ইশতেহারে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। দলটি বলছে, ক্ষমতায় গেলে সৎ, দক্ষ ও জনবান্ধব নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবে, মসজিদভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলবে এবং ঘোষিত ইশতেহারের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে কঠোর থাকবে।

সব মিলিয়ে নারী, তরুণ, সংখ্যালঘু ও ধর্মভিত্তিক ভোটের জোট গড়ে তোলা, এবং নতুন প্রজন্মের পরিচ্ছন্ন নেতৃত্ব সামনে আনা-এই সমন্বিত প্রচেষ্টা যদি মাঠে বাস্তব রূপ পায়, তবে জামায়াত রাজনীতির নতুন সমীকরণে ক্ষমতার দ্বারেও পৌঁছাতে পারে-এমনই ইঙ্গিত মিলছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আলোচনায়।


এসএইচ