মনোনয়ন নিয়ে তীব্র টানাপোড়েন

যেসব আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিল বিএনপি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৫, ০৩:২২ পিএম
ফাইল ছবি

দুইশ আটত্রিশ আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। ধানের শীষের প্রতীক পেয়ে প্রার্থীরা এখন মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন, তবে এরই মধ্যে কিছু আসনে দেখা দিয়েছে তীব্র কোন্দল। বিদ্রোহী প্রার্থীরা মাঠ ছাড়েননি, ফলে একাধিক আসনে তৈরি হয়েছে জটিল টানাপোড়েন।

বিএনপি সূত্র জানায়, ঘোষিত প্রার্থীদের মাঠপর্যায়ের কর্মকাণ্ড গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে দলটি। বিশেষ করে মনোনয়নবঞ্চিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রার্থীরা কেমন আচরণ করছেন, সেটিই এখন মূল বিবেচ্য বিষয়। যারা ঐক্য তৈরিতে উদ্যোগ নিচ্ছেন, তাদের কাজে বাধা দিলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে।

[260418]

তবে ঘোষিত আসনের মধ্যে অন্তত ২৩টিতে দেখা দিয়েছে তীব্র বিরোধ। বিএনপির নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল নেতাদের তদন্তে জানা গেছে, এসব আসনে মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা এখনো শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বলে আশঙ্কা করছে হাইকমান্ড।

৬৩টি ফাঁকা আসনের বেশির ভাগই শরিক দলগুলোর জন্য ছাড় দেওয়া হতে পারে। চলতি মাসের শেষ দিকে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি ও মিত্র রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হতে পারে। তার আগেই অন্তত ১১ আসনে দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

[260386]

সূত্র বলছে, ঘোষিত প্রার্থী তালিকাকে ঘিরে তৈরি হওয়া অসন্তোষ গত কয়েক দিনে আরও প্রকাশ্যে এসেছে। মাঠপর্যায়ে প্রার্থীদের অবস্থান নিরপেক্ষভাবে যাচাই করছে দল। যাচাই-বাছাইয়ের পর কিছু আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকায় পরিবর্তন আনার ইঙ্গিতও দিয়েছেন নীতিনির্ধারকেরা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, কয়েকটি আসনে ক্ষোভ হতেই পারে। এসব বিষয় দল ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ফাঁকা আসন সব মিত্রদের জন্য রাখা হবে না; এর কিছু আসনে দলীয় প্রার্থীও ঘোষণা দেওয়া হবে শিগগিরই।

[260378]

৩ নভেম্বর গুলশানে ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য একক প্রার্থী ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া শরিক দলগুলো যেসব আসনে আগ্রহী, সেখানে বিএনপি প্রার্থী দেয়নি। তবে এই তালিকা চূড়ান্ত নয়, পরিবর্তন আসতে পারে।

ঘোষণার পর থেকেই অন্তত ২৩টি আসনে ক্ষোভ ও বিক্ষোভ চলছে। অনেক এলাকায় প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন, মশাল মিছিল ও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। সাতক্ষীরা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জ, রংপুর, কক্সবাজার, নাটোর, নারায়ণগঞ্জ, মেহেরপুর ও চট্টগ্রামের কয়েকটি আসনে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের বিক্ষোভে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

[260308]

বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, যারা মনোনয়ন পেয়েছেন, তাদের দায়িত্ব হচ্ছে বঞ্চিতদের সঙ্গে ঐক্য গড়ে দলের পক্ষে কাজ করা। সেটা করতে ব্যর্থ হলে প্রয়োজন অনুযায়ী প্রার্থী পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে যদি ঐক্যের পথে বাধা আসে, দায়ীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র বলছে, মাঠপর্যায়ের জনপ্রিয় কিছু নেতা মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন। তাদের কেউ কেউ অন্য দল থেকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাবও পাচ্ছেন। বিএনপি মনে করছে, এসব ক্ষেত্রে ভোট বিভাজনের কারণে তৃতীয় কোনো দলের প্রার্থী সুবিধা পেতে পারে। তাই সব পরিস্থিতি বিবেচনা করে কিছু আসনে প্রার্থী পুনর্মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে ঢাকা-৯, ঢাকা-১৮, ঢাকা-২০, মাদারীপুর-২, গাজীপুর-১, টাঙ্গাইল-৫, চট্টগ্রাম-৬, চট্টগ্রাম-৯, চট্টগ্রাম-১১, ঝিনাইদহ-৪ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা হতে পারে শিগগিরই।

[260382]

দলীয় সূত্রের ভাষায়, ‘ধানের শীষের বিজয়ের স্বার্থে প্রয়োজনে প্রার্থী পরিবর্তন করা হবে, কিন্তু ঐক্য নষ্ট করা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।’

এসএইচ