ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কয়েকজন নেতার মামলার রায়কে ঘিরে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ আবারও মাঠে নামার চেষ্টা করছে। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা দলটির ঘোষিত ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ইতোমধ্যেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র উত্তেজনা তৈরি করেছে।
বিদেশে থাকা সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সম্প্রতি ভিডিও বার্তায় ১০ থেকে ১৩ নভেম্বর বিক্ষোভ এবং ১৩ নভেম্বর ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লুকিয়ে থাকা নেতাকর্মীদের সক্রিয় প্রচার এ কর্মসূচিকে আরও আলোচনায় এনেছে। এরই মধ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ, বাসে আগুন, উত্তেজনাকর প্রচারণা-সব মিলিয়ে জনমনে শঙ্কা বাড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে দলটির বিভিন্ন সূত্র বলছে, প্রায় এক বছর তিন মাস আত্মগোপনে থাকা নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে আবারও সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছেন। গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ কার্যত নেতৃত্বশূন্য ও অচলাবস্থায় পড়েছিল। অধিকাংশ নেতা দেশত্যাগ বা আত্মগোপন করায় দলটি প্রায় পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়ে।
অতীতের মানবতাবিরোধী অপরাধ, উত্তেজনাকর প্রচারণা, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানো, সহিংস কর্মকাণ্ড এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগে দলটির বিরুদ্ধে বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। বিচার কাজ চলমান থাকায় গত মে মাসে সরকার আওয়ামী লীগ এবং তাদের সব অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে।
তবে নিষিদ্ধ অবস্থাতেই শেখ হাসিনার সঙ্গে দলটির তৃণমূল নেতাদের নিয়মিত যোগাযোগ চলছে বলে একাধিক সূত্র দাবি করেছে। দেশের বিভিন্ন ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে তিনি মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথা বলে নির্দেশনা দিচ্ছেন। ‘ঢাকা লকডাউন’ নিয়েও তিনি নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিতে উৎসাহ দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে গত কয়েক দিনের ধারাবাহিক সহিংসতার ঘটনাকে সরকার অত্যন্ত উদ্বেগজনক হিসেবে দেখছে। ঢাকায় বাসে আগুন, ধানমন্ডিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণসহ নানা ঘটনায় সরকার সরাসরি নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ভাষ্য-দলটি লকডাউন ঘিরে বিশৃঙ্খলা ছড়াতে চাইছে।
সরকার বলেছে, ১৩ নভেম্বর কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সহ্য করা হবে না। নিরাপত্তা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে, রাজধানীতে বিশেষ নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
তবে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতারা নিজেদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, সরকার পরিস্থিতিকে অন্য খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। তারা বলছেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘কথিত আদালতের নামে সাজানো রায়ের’ প্রতিবাদ এবং জনমতের প্রতিফলন হিসেবেই লকডাউন কর্মসূচি পালন করা হবে।
আত্মগোপনে থাকা এক নেতা জানিয়েছেন, নেতাকর্মীরা ব্যাপকভাবে রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দলের প্রতি আনুগত্য দেখানোর চেষ্টা করবেন।
রায়ের তারিখ ঘনিয়ে আসছে, আর তার সঙ্গে বাড়ছে উত্তেজনা। নিষিদ্ধ রাজনৈতিক শক্তির এই পুনরুত্থান দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন অনিশ্চয়তার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এসএইচ