রাজধানীর বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে সিসিইউতে জীবন-মৃত্যুর সীমানায় লড়ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। গত ২৩ নভেম্বর থেকে শারীরিকভাবে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন তিনি। দেশের প্রতিটি চোখ এখন তার স্বাস্থ্যের দিকে। কিন্তু অন্যদিকে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন-তারেক রহমান কেন দেশে ফিরছেন না?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিষয়টি শুধু একজন সন্তানের মানবিক দায় নয়, বরং বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং দেশের গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
সিসিইউতে খালেদা জিয়ার অবস্থার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়াচ্ছে। কেউ বলছেন লাইফ সাপোর্টে, কেউ বলছেন ভেন্টিলেশনে। চিকিৎসকরা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তিনি চিকিৎসাধীন আছেন এবং দেশবাসীকে গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
তবে তারেক রহমানের দেশে না ফেরার কারণ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে জটিল আলোচনা চলছে। তিনি নিজের ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত তার একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই শব্দের আড়ালে লুকানো আছে রাজনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক জটিল সমীকরণ।
২০০৮ সালে লন্ডনে চলে যাওয়ার পর তার পাসপোর্ট নবায়ন হয়নি। সরকার ট্রাভেল পাস দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও বিএনপির নেতাদের মতে, একজন জাতীয় নেতার দেশে ফেরা শুধুমাত্র ট্রাভেল পাসে হওয়া যায় না। তারা চান, তারেক রহমান ‘সবুজ পাসপোর্ট’ হাতে নিয়ে দেশে ফিরবেন।
দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাস দেখায়, জনপ্রিয় নেতাদের নির্বাসন থেকে ফেরার মুহূর্তে হামলার ঝুঁকি থাকে। এক-এগারো সরকারের সময় যে ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা পরিকল্পিত হয়েছিল, পাঁচ আগস্টের পর তা ‘মাইনাস ফোর’ রূপ নিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রধান লক্ষ্য-তারেক রহমানকে রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে সরানো।
এসএসএফ নিরাপত্তা ঘোষণা এবং মামলাসমূহ থেকে খালাস পাওয়ায় অনেক রাজনৈতিক বাধা সরলেও, নিরাপত্তা ঝুঁকি এখনো অবসন্ন নয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সঙ্গে তারেক রহমানের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এখনও অস্থির। ২০০৮ সালের উইকিলিকস বার্তা অনুযায়ী, তারেক রহমানকে ‘দুর্নীতি ও সহিংস রাজনীতির প্রতীক’ হিসেবে দেখার ইতিহাস রয়েছে। সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে তিনি ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’ নীতি স্পষ্ট করলেও, প্রতিবেশী দেশগুলোর কৌশল এখনও অদৃশ্য ঝুঁকি হিসেবে থেকে গেছে।
জামায়াত ও তাদের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের নিয়ন্ত্রণে থাকা অনলাইন বাহিনী তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে। বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, মায়ের মৃত্যুশয্যায়ও ছেলে দেশে ফেরার সাহস পাচ্ছে না। এটি মূলত সাধারণ মানুষের আবেগকে ব্যবহার করে নেতার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার কৌশল।
১ ডিসেম্বর সরকার খালেদা জিয়াকে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ঘোষণা করেছে। এটি মূলত তারেক রহমানের নিরাপত্তার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি তিনি যুক্ত ছিলেন। দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই-বিশেষ করে বিজয় দিবসের আগে-তিনি দেশে ফিরতে পারেন।
তারেক রহমানের ফেরা শুধু মায়ের পাশে থাকার জন্য নয়, এটি দেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় খুলবে। নিরাপত্তা, ভূরাজনীতি ও সামাজিক অপপ্রচারের জাল ছিঁড়ে তিনি কবে দেশে ফিরবেন-এখন সেটিই সময়ের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
এসএইচ