বিএনপিকে একগুচ্ছ পরিকল্পনা দিলেন তারেক রহমান

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৫, ০৫:০৮ পিএম
ফাইল ছবি

দুর্নীতি কীভাবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে পঙ্গু করে দিচ্ছে, তা ব্যাখ্যা করে এক বিস্তৃত বিশ্লেষণ ও পরিকল্পনার খসড়া প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান লিখেছেন, দূরে তাকানোর প্রয়োজন নেই-মেধার ভিত্তিতে চাকরি খুঁজতে বের হওয়া গ্র্যাজুয়েট, মাসের পর মাস সাধারণ সেবা পেতে হিমশিম খাওয়া কৃষক, হাসপাতালে ভোগান্তিতে পড়া তরুণের পরিবার কিংবা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ঘুষ দিতে বাধ্য হওয়া উদ্যোক্তাদের দিকে তাকালেই বোঝা যায় দুর্নীতি কতটা ভয়াবহভাবে জীবনকে অসহনীয় করছে।

তিনি মনে করেন, বহু বছরের অব্যবস্থাপনা দুর্নীতি–বিরোধী লড়াইকে কঠিন করে তুলেছে। তবে বিএনপি দায়িত্ব পেলে সেই যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। তাঁর ভাষায়, খাবারের দাম কেন বাড়ে, ভালো শিক্ষার সুযোগ কেন সংকুচিত হয়, রাস্তায় কেন নিরাপত্তাহীনতা-সব কিছুর পেছনেই একই কারণ: দুর্নীতি। এটা লাখো মানুষের প্রতিদিনের জীবনকে দমবন্ধ করে ফেলেছে।

পোস্টে তিনি তুলে ধরেন অতীতে বিএনপি সরকারের নেওয়া কয়েকটি সংস্কারের বিষয়ও। তারেক রহমান জানান, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রশাসনে শৃঙ্খলা ও সেবায় স্বচ্ছতা ফেরাতে যে পদক্ষেপ নেন, তা অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার কমিয়েছিল। এরপর বেগম খালেদা জিয়ার আমলে নতুন ক্রয় নীতিমালা, কঠোর আর্থিক আইন, শক্তিশালী অডিট ব্যবস্থা ও আধুনিক নজরদারি ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে সরকারি সেবার মান বদলে যায়।

তিনি মনে করিয়ে দেন, ২০০৪ সালে গঠিত দুর্নীতি দমন কমিশন ছিল বাংলাদেশের জবাবদিহিতার বড় পদক্ষেপ। বিশ্বব্যাংক ও এডিবি এ উদ্যোগকে প্রশংসা করেছিল। টিআইবির জরিপেও দেখা যায়, ২০০২ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে দুর্নীতির অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়।

বিএনপি আমলের কিছু উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, বাজেট নিয়ন্ত্রণ, অডিট ও মানি লন্ডারিং–বিরোধী আইন প্রণয়ন; প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ব্যবস্থা; টেলিকম ও মিডিয়ার মতো খাতে উন্মুক্ত বাজারনীতি; এবং প্রশাসনে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ-এসব পদক্ষেপ দেশে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছিল। তাঁর দাবি, দুর্নীতি কমানোর ক্ষেত্রে ধারাবাহিক সাফল্যের রেকর্ড একমাত্র বিএনপিরই আছে।

পোস্টে আগামী দিনের জন্য বিএনপির সাত দফা কর্মপরিকল্পনাও তুলে ধরেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে আদালত, দুদক, নির্বাচন কমিশনসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা; সম্পূর্ণ স্বচ্ছ দরপত্র ব্যবস্থা; দ্রুত বিচার ও পুলিশি পেশাদারিত্ব; সব সরকারি সেবা ডিজিটাল মাধ্যমে এনে ঘুষের সুযোগ কমানো; হুইসলব্লোয়ার সুরক্ষা; শিক্ষায় নৈতিকতার পাঠ অন্তর্ভুক্তি; এবং স্বাধীন অডিট ও সংসদীয় নজরদারি জোরদার করা।

তারেক রহমান বলেন, বহু বছরের অব্যবস্থাপনার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই কঠিন হবেই। তবে বাংলাদেশের ইতিহাস প্রমাণ করে, সৎ নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা ও জনগণের সমর্থন মিললে পরিবর্তন অসম্ভব নয়। জনগণ দায়িত্ব দিলে বিএনপি আবারও সেই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।

এসএইচ