হাদিকে গুলির নেপথ্যে যুবলীগ নেতা সম্রাট? খতিয়ে দেখছে পুলিশ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০২৫, ০৬:০১ পিএম
ফাইল ছবি

জুলাই বিপ্লবের অগ্রনায়ক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের নাম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সন্দেহ, এই হামলার পেছনে সম্রাটের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগসূত্র থাকতে পারে।

ঘটনার নেপথ্যের সব তথ্য উদঘাটনে শনিবার দিনভর মাঠপর্যায়ে কাজ করেছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তদন্তসংশ্লিষ্টদের ধারণা, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচন ভণ্ডুল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই হাদির ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এতে দেশবিরোধী শক্তির মদত থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।

হাদির ওপর হামলার পর জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন অংশীজন, আসন্ন নির্বাচনের প্রার্থী এবং রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, এই হামলার মাধ্যমে আন্দোলন সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দল, গোষ্ঠী ও নেতাদের লক্ষ্য করেই এই হামলা। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঠেকাতে ঢাকাসহ সারা দেশে রেকি ও তল্লাশি কার্যক্রম জোরদার করা হবে। পাশাপাশি জামিনে মুক্ত থাকা সন্ত্রাসীদের তালিকা নতুন করে প্রস্তুতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তদন্তে জানা গেছে, জুলাই বিপ্লবের পর ইসমাইল হোসেন সম্রাট ভারতে পালিয়ে যান। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ ফয়সাল করিম মাসুদ নামে এক নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ক্যাডারকে শনাক্ত করেছে বলে জানানো হয়েছে। তবে শনিবার রাত পর্যন্ত গুলিবর্ষণে সরাসরি জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

হামলায় জড়িত দুই ব্যক্তি যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে, সে জন্য দেশের সব বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগকে সতর্ক বার্তা পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, হাদির ওপর হামলার ঘটনায় মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে ডিবি পুলিশ ও র‌্যাব। কেন, কারা এবং কী উদ্দেশ্যে তাকে গুলি করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হতে পারে। শনিবার রাত পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়নি, তবে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, মোটরসাইকেলের পেছনে বসে গুলি করতে দেখা যাওয়া ব্যক্তির চেহারার সঙ্গে ফয়সাল করিম মাসুদের মিল রয়েছে। তাকে এই হামলার অন্যতম প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ফয়সালের বিরুদ্ধে আগেও গুরুতর অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আদাবর এলাকায় একটি অফিসে ঢুকে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় তাকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করেছিল।

হাদির ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশের সন্দেহের তালিকায় আরও কয়েকজনের নাম রয়েছে, যার মধ্যে পলাতক যুবলীগ নেতা সম্রাট অন্যতম। তদন্তসংশ্লিষ্টদের ধারণা, হাদিকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের মাধ্যমে পতিত স্বৈরাচ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি চক্র ভোটের পরিবেশ অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, অস্ত্র আইনে সম্রাটের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় রয়েছে এবং তিনি বর্তমানে ভারতে আত্মগোপনে আছেন। তদন্ত এগোলে এই হামলার পেছনের চক্র ও উদ্দেশ্য আরও স্পষ্ট হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

এসএইচ