আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি দৃশ্যত জোটের পথে হাঁটছে না, কিন্তু পর্দার আড়ালে চলছে সূক্ষ্ম সমঝোতার হিসাব। যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের নিয়ে এত দিনের ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনের ভাবনায় পরিবর্তন এনে দলটি এখন আনুষ্ঠানিক জোট নয়, আসনভিত্তিক সমঝোতার কৌশল বেছে নিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, নির্বাচনে শরিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো জোট হচ্ছে না বিএনপির। তবে কয়েকটি নির্দিষ্ট আসনে সমঝোতার মাধ্যমে ছাড় দেওয়া হবে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শরিক দলগুলোর কয়েকজন শীর্ষ নেতার আসনে বিএনপি প্রার্থী দেবে না। আবার যেসব আসনে আগে থেকেই প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে সমঝোতা হলে সেই প্রার্থী সরিয়ে নেওয়ার পথও খোলা রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া কিছু আসনে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখার চিন্তাও করছে বিএনপি। এসব আসনে শরিক দলগুলো চাইলে বিএনপির প্রার্থীর বিপক্ষে নির্বাচন করতে পারবে। নির্বাচনকেন্দ্রিক বাস্তবতা ও মাঠের সমীকরণ বিবেচনায় রেখেই এমন নমনীয় কৌশল নিচ্ছে দলটি বলে জানা গেছে।
দলীয় নেতাদের মতে, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে নির্বাচন সহজ হবে-এমন ধারণা থাকলেও বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। গত তিনটি নির্বাচনে ভোটের সুযোগ না থাকায় বিএনপির ভেতরে তৈরি হয়েছে প্রার্থীজট। পাশাপাশি দীর্ঘ দমন-পীড়নের পর এবার বহু নেতা নির্বাচন করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ফলে শরিকদের আসন ছাড় দেওয়ার প্রশ্নে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।
শরিকদের সঙ্গে আলোচনার দায়িত্বে থাকা নেতারা জানান, বিজয়ের সম্ভাবনা আছে-এমন প্রার্থীদের ক্ষেত্রে আসন ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। তবে কোন আসনে কাকে ছাড় দেওয়া হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ নিয়ে শরিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা চলছে।
ইতিমধ্যে বিএনপি দুই দফায় ২৭২টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এসব ঘোষণার আগে শরিকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা না হওয়ায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। শরিক দলগুলোর দাবি, ঘোষিত আসনগুলোর মধ্যেই এমন কিছু আসন রয়েছে, যেখানে তারা প্রার্থী দিতে চায়।
গণতন্ত্র মঞ্চভুক্ত কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতার আসনে বিএনপি প্রার্থী না দেওয়ার চিন্তা করছে। নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, জেএসডি ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতাদের আসন নিয়ে সমঝোতার আলোচনা চলছে। পাশাপাশি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গেও আলাদা গুরুত্ব দিয়ে কথা বলছে বিএনপি।
আসন সমঝোতার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি লন্ডনে থেকে সিদ্ধান্ত দেবেন নাকি দেশে ফিরে তা চূড়ান্ত করবেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি। ২৫ ডিসেম্বর তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এর মধ্যেই মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়সীমা শেষ হবে।
সব মিলিয়ে প্রকাশ্যে জোট নয়, নীরব সমঝোতার পথেই এগোচ্ছে বিএনপি। নির্বাচনী মাঠে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে এই কৌশল কতটা কার্যকর হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
এসএইচ