ঈমানের পরিচয় ও তাৎপর্য

  • রাশেদ নাইব | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২১, ০১:৩৪ পিএম

ঢাকা : একজন ব্যক্তিকে মুসলিম হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম ঈমানদার হতে হবে। ইসলামের পাঁচটি অন্যতম স্তম্ভের মাঝে ঈমানের স্থান প্রথমে। কোনো ব্যক্তি ঈমানবিহীন যতই আমল করুক না কেন, সেই আমলে কোনো প্রকাশ লাভবান হবে না। বরং চিরস্থায়ী পরকালের জীবনীতে তাকে ভয়াবহ জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হওয়া লাগবেই। তাই ঈমানকে ইসলামের মূল খুঁটি বললে অত্যুক্তি হবে না।

ঈমান শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বিশ্বাস, যা ভীতি ও সন্দেহের বিপরীত। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, একটি সন্তান যেমন তার মা-বাবার কাছে নিরাপদ। তদ্রূপ বান্দা ঈমান আনার পরে আল্লাহর জিম্মায় ভরসা করে নিরাপদ থাকে। এর পারিভাষিক অর্থ হলো, হূদয়ে দৃঢ় বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি ও কাজে বাস্তবায়নের নাম হলো ঈমান। যা আনুগত্যে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং গোনাহে হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। ঈমান হলো মূল এবং আমল হলো শাখা। ইসলাম ধর্মে ঈমানের অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। ঈমানের ছয়টি স্তম্ভ হচ্ছে-(ক) একক ইলাহ হিসেবে আল্লাহকে বিশ্বাস করা। (খ) আল্লাহর ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস করা। (গ) সমস্ত আসমানি কিতাবসমূহতে বিশ্বাস। (ঘ) সকল নবী ও রাসুলের প্রতি বিশ্বাস। (ঙ) তাকদির বা ভাগ্যের ভালো মন্দের প্রতি বিশ্বাস। (চ) আখিরাত বা পরকালের প্রতি বিশ্বাস। কোনো ব্যক্তি যদি এই ছয়টি বিষয়ের ওপর ঈমান আনয়ন না করে, তাহলে সে কোনো রূপেই মুসলিম হিসেবে গণ্য হবে না। অথবা কেউ যদি বলে আমি পাঁচটির ওপর ঈমান আনয়ন করলাম কিন্তু একটির ওপর নয়, তবুও সে ব্যক্তি ঈমানদার সাব্যস্ত হবে না।

ঈমানের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়া'লা ইরশাদ করেন, ‘রাসুলের প্রতি তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতে সে বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং বিশ্বাসীগণও। সকলে আল্লাহতে, তাঁর ফিরিশতাগণে, তাঁর কিতাবসমূহে এবং তাঁর রাসুলগণে বিশ্বাস স্থাপন করেছে। (তারা বলে,) আমরা তাঁর রাসুলগণের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না। আর তারা বলে, ‘আমরা শুনলাম ও মান্য করলাম! হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তোমার ক্ষমা চাই, আর তোমারই দিকে (আমাদের) প্রত্যাবর্তন হবে।’ এটা একমাত্র প্রকৃত ঈমানদারের লক্ষণ। তারা কোনোরূপ সন্দেহ করবে না। প্রশ্নবিহীন ভাবেই তারা মেনে নেবে আল্লাহ এবং ঈমানের অন্যান্য বিষয়াদি। প্রকৃত ঈমানদারগণ কখনো নবী-রাসুলদের মাঝে তারতম্য সৃষ্টি করবে না। এই ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী! আপনি বলুন, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর ওপর এবং যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের ওপর, ইব্রাহিম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তাঁদের সন্তানবর্গের ওপর আর যা কিছু পেয়েছেন মুসা ও ঈসা এবং অন্যান্য নবী রাসুলগণ তাঁদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে। আমরা তাঁদের কারো মধ্যে পার্থক্য করি না। আর আমরা তাঁরই অনুগত।’

ঈমান কী? এটা আরো সহজ ভাবে জানার জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী বর্ণনা দিয়েছেন। হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাস করল, ঈমান কী? তিনি বললেন, যখন তোমার ভালো কাজ তোমাকে আনন্দিত করবে এবং খারাপ কাজ তোমাকে কষ্ট দেবে তথা অনুতপ্ত করবে তখন তুমি বুঝবে তুমি ঈমানদার ব্যক্তি। ঐ ব্যক্তি বলল, অতঃপর গুনাহ কী? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যখন তোমার হূদয়ে কোন বিষয় সংশয় সৃষ্টি করে, তখন তা তুমি ছেড়ে দাও।

(আলবানি হাদিসটিকে ছিলছিলা সহিহায় উল্লেখ করেছেন ৫৫০) হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘ঈমানদার ব্যক্তি ও ঈমানের দৃষ্টান্ত হচ্ছে খুঁটির সাথে (রশি দিয়ে বাঁধা) ঘোড়া,যা চতুর্দিকে ঘুরতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত খুঁটির দিকেই ফিরে আসে। অনুরূপভাবে ঈমানদার ব্যক্তিরাও ভুল করে থাকে। কিন্তু শেষে পর্যন্ত সে ঈমানের দিকেই ফিরে আসে। অতএব তোমার মুত্তাকি লোকদেরকে তোমাদের খাদ্য খাওয়াও এবং ঈমানদার লোকদের সাথে ভালো ব্যবহার কর।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান; বাবুত তাওবাহ, ৬১৮) পরিশেষ কথা হলো ঈমানদার ব্যক্তি নির্ধিদায় নিশ্চিন্তে

একমাত্র আল্লাহ ও অন্যান্য বিষয়াদির উপড় ঈমান রেখে ইসলামের সকল কার্যসমূহ মেনে চলবে। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে ইসলামের সকল বিধান মেনে সঠিক ঈমানদার হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক