জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বিপর্যয়ের কারণ, নতুন ক্রাইসিসম্যানের আবির্ভাব

  • মো. আতিক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২২, ০৪:৫৬ পিএম

ঢাকা:  কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয় তো দূরের কথা, ওয়ানডে ম্যাচ জিততেও যেন ভুলে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে।  

সেই হিসেবেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যখনই ধুঁকতে থাকে বাংলাদেশ, ঠিক তখনই জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সিরিজ আয়োজন করে বিসিবি। এই কারণে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজকে অনেকেই 'বিপদের বন্ধু' হিসেবে অ্যাখ্যা দেন। 

কিন্তু এবার হলো ঠিক তার উল্টো। টেস্ট আর টি-টোয়েন্টিতে ভালোভাবেই ধুঁকছে বাংলাদেশ দল। একটা স্বস্তির জায়গা ছিল সেটা ওয়ানডে। কিন্তু জিম্বাবুয়েতে গিয়ে সেটিও খোয়ালো টাইগাররা। টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই এক সিকান্দার রাজার কাছে অসহায় ছিলেন ১১ টাইগার। 

শেষদিকে দ্রুত রান তুলতে না পারার খেসারত দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগের পয়েন্ট তালিকায়ও দুই নম্বরে বাংলাদেশের অবস্থান। তবু এই সিরিজ হার যেন বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার শুরুর দিকের দুরবস্থা ও জিম্বাবুয়ের আধিপত্যের সময়টা মনে করিয়ে দিয়েছে।

ওয়ানডে সিরিজের দল নির্বাচনের কিছু সিদ্ধান্তও ছিল প্রশ্ন তোলার মতো। প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে কোনো বাঁহাতি স্পিনার ছাড়াই খেলেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে এসে প্রথম ম্যাচের ভুল শুধরে তাইজুল ইসলামকে সুযোগ দেওয়া হয়। অথচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ সিরিজে ৩ ম্যাচে ৫ উইকেট নেওয়া নাসুমের ইকনোমি ছিল অবিশ্বাস্য (২.৬৭)।

ক্রিকেট চাতুর্যেও জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠের একদম কোনার উইকেটে প্রথম দুটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলিয়ে ঘরের মাঠের সুবিধার পুরো ফায়দা নিয়েছে জিম্বাবুয়ে। এক পাশে বিশাল বাউন্ডারি, আরেক পাশে ছোট-এমন অদ্ভুত আকৃতির মাঠের সুবিধা দুটি ম্যাচেই বাংলাদেশের চেয়ে ভালোভাবে নিয়েছে জিম্বাবুয়ে। ছোট সীমানার দিকে চার-ছয় মেরেছে, বড় সীমানার দিক থেকে প্রচুর এক-দুই নিয়েছে স্বগতিকেরা। বাংলাদেশ পিছিয়ে গেছে এই জায়গাতেও। 

তবে নিজেদের ৪০০ তম ওয়ানডেতে স্বস্তির জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আগের দুই ম্যাচে বড় রান করেও হারতে হয়েছে। তবে তৃতীয় ওয়ানডেতে তার চেয়েও কম রান নিয়ে যে জয়টা এল এটা নিয়ে খোদ তামিমও সন্দিহান ছিলেন। তামিম ভেবেছিলেন, ৩৫ ওভারের মধ্যেই হেরে যাবে দল। 

তবে জয়ের পর তামিম আলাদাভাবেই আফিফ হোসেনের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করেছেন। ওয়ানডে অভিষেকের পর থেকেই ফিনিশারের ভূমিকায় একাদশে আছেন আফিফ। অথচ বয়স ভিত্তিক দলগুলোতে তিনি ছিলেন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। আফিফ যে ফিনিশার নন, একজন সলিড ব্যাটসম্যান সেটি অবশ্য এতদিনেও বুঝতে পারছেনা বাংলাদেশ দল।

তবে নিজের সক্ষমতা প্রমাণে বারবার জ্বলে উঠেছে আফিফ হোসেনের ব্যাট। শেষ ম্যাচে আফিফ হোসেন যখন ক্রিজে এসেছিলেন তখন বাংলাদেশ ২৪.৪ ওভারে চার উইকেট হারিয়ে ১২৪ রান করেছিল। পুরো দল যতটা চাপে ছিল, তার চেয়ে বেশি চাপে ছিলেন অন্য প্রান্তের ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ। তার ক্রমাগত ডট বলের চাপ স্বাভাবিকভাবেই আফিফের উপর এসেছিল। 

কিন্তু চাপের মুখে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে শেখা আফিফ হোসেনের কিসের ভয়। শুরু থেকেই মাঠের চারপাশে শটস খেলতে শুরু করেন তিনি; আর সেই সাথে নিয়মিত সিঙ্গেল বের করে সচল রেখেছিলেন রানের চাকা। 

ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে ৬৯ বলে ৩৯ রান করে আউট হন মাহমুদউল্লাহ। দলীয় রান তখন ৩৪.১ বলে ১৭৩। স্বীকৃত ব্যাটসম্যান ছাড়াই বাকিপথ বাংলাদেশকে একা টেনে নিয়েছেন আফিফ হোসেন। মিরাজ, তাইজুলদের সাথে ছোট ছোট জুটি গড়ে বাংলাদেশে এনে দিয়েছেন লড়াইয়ের পুঁজি। 

শেষপর্যন্ত ৮৫ রানে অপরাজিত ছিলেন আফিফ হোসেন। ছয়টি চার আর দুই ছয়ে এই ইনিংস খেলেন তিনি। পুরোটা সময়ের কখনোই আফিফ হোসেনকে পাওয়ার হিটার মনে হয়নি। ক্রিজে সেট হওয়ার পর বাউন্ডারি বের করতে শুরু করেছিলেন। এসব বাউন্ডারিও এসেছে নিখুঁত টাইমিংয়ের জোরে। 

এতকিছুর পরেও আফিফ হোসেনের জায়গা হয় না ব্যাটিং অর্ডারের উপরের দিকে। কোন এক অদৃশ্য সুতোর টানে আফিফকে থেকে যেতে হচ্ছে ছয়-সাত নম্বরে। অথচ তার মত একজন ক্ল্যাসিক্যাল ব্যাটসম্যানের সেরাটা আদায় করতে চাইলে জায়গা দিতে হবে উপরের দিকে। এই বামহাতি ব্যাটার যত বেশি বল খেলতে পারবেন তত বেশি লাভবান হবে বাংলাদেশ দল।

এর আগে চলতি বছরের শুরুর দিকে আফগানিস্তান সিরিজেও ক্যারিয়ার সেরা পারফর্ম করতে দেখা গিয়েছিল আফিফ হোসেনকে। সেদিনের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর এর কারণ দ্রুত উপরের ব্যাটার আউট হওয়ায় তিনি অনেক আগে মাঠে এসেছিলেন। 

একই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল ঐতিহাসিক দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে আরো একবার প্রতিরোধ গড়েছিলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। 

একটা সময় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ক্রাইসিসম্যান ডাকা হতো। ২০১৯ সালের আগ পর্যন্ত প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্মও করেছিলেন তিনি। কিন্তু বয়সের ভারে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া রিয়াদ এখন দলের বোঝার মতই। সাম্প্রতিক ফর্ম অনুযায়ী দলের প্রকৃত ক্রাইসিসম্যান এখন তরুণ আফিফ। 

নিজের অবস্থা এবং আফিফের উত্থান দেখে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ চাইলে তার আগে আফিফকে পাঠাতে পারেন ব্যাটিংয়ে। কিন্তু সেটা ঘটছে না, তাই আফিফের সেরাটা পেতে হলে অপেক্ষা করতে হয় আরো একটি ব্যাটিং বিপর্যয়ের জন্য।  

সোনালীনিউজ/এআর