কলম্বো জিতে উৎসবে রঙিন বাংলাদেশ

  • ক্রীড়া প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০১৭, ০৬:০৭ পিএম

ঢাকা: এই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় ছিল বাংলাদেশ। চতুর্থ দিনে যেখানটায় খেলা শেষ হয়েছিল থরথর কাঁপছিল ১৬ কোটি বসতির এই দেশ। গত রাতে শোয়ার আগে ভেতরে নিশ্চয় অদ্ভুত ভালোলাগা হচ্ছিল, আবার অজানা শঙ্কাও ঘিরে রেখেছিল। শ্রীলঙ্কার লেজের দুই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে মুশফিকুর রহীমের দল বাংলাদেশকে উৎসবে রঙিন করতে পারবে তো?

রাতে ঘুমাতে যাবার আগে নিশ্চিত বাংলাদেশীদের মনে এক ধরণের দোলাচল ছিল। কি হয়, কি হয়...! হবারই কথা, নিশ্চয় মনে পড়ে গিয়েছিল ওয়েলিটংন টেস্টের কথা। ৫৯৪ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল মুশফিকুর। তারপরও ম্যাচ বাঁচানো যায়নি। কলম্বোর পি সারা ওভাল তো আবার ওয়েলিংটন হবে না? আরও কতশত চিন্তা মাথায় ভর করেছিল এদেশের অজস্র ক্রিকেট ভক্তদের মনে। না, মুশফিকুররা এবার ভুল করলেন না। হাতের মুঠোয় চলে আসা ম্যাচটি হাতছাড়াও করেননি। ৪ উইকেটে জিতে তারা যেন গগনবিদারি আওয়াজই তুললেন, ‘বিশ্ব দেখ আমরা এসে গেছি।’ শুধু রঙিন পোশাক নয়, সাদা পোশাকের বাংলাদেশও অদম্য। বাংলাদেশ যে আস্তে আস্তে ক্রিকেটে বড় নাম হয়ে উঠছে এটা তারও প্রমাণ নয় কী?

টেস্টে ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের। তারপর নানা চড়াই-উৎরাই পেরোতে হয়েছে লাল-সবুজের দেশটিকে। কখনও কখনও বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। তারপরও দমেনি অদম্য বাংলাদেশ। সেই ফল এখন আসছে। গল টেস্টে বড় পরাজয়ের পর গর্তে না ঢুকে কলম্বোয় গৌরবের টেস্ট জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ।

এ এমন এক গৌরব যা ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা-নিউজিল্যান্ডও পারেনি। ইতিহাসে মাত্র চতুর্থ দেশ হিসেবে শততম টেস্ট জয়ের কৃতিত্ব দেখাল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এটি প্রথম জয়। যেটি ধরা  দিল ১৮ বারের প্রচেষ্টায়।

জয়ের জন্য তখন বাংলাদেশের দরকার ৪ রান। দিলরুয়ান পেরেরার বলে রিভার্স সুইপ করলেন মুশফিক। সেই শট বাউন্ডারিতে যাচ্ছিল ভেবে তিনি উল্লাসও শুরু করলেন। হলো দুই রান। তার এই উল্লাস ক্ষণিকের জন্য নিয়ে গিয়েছিল বেঙ্গালুরুতে। যেখানে ভারতের বিপক্ষে জয় তুলে নেওয়ার আগেই উল্লাসে মেতেছিলেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক। পরে সেই ম্যাচটি ১ রানে হেরে পুড়েছিল বাংলাদেশ। এবার অবশ্য তা হয়নি। মুশফিক জয় নিয়ে তবেই মাঠ ছেড়েছেন।

বাংলাদেশের পঞ্চম দিনের শুরুটা হয়েছিল একটা শঙ্কা নিয়ে। কিছুতেই ফেরানো যাচ্ছিল না দিলরুয়ান পেরেরা-সুরঙ্গা লাকমলকে।  উল্টো ১৩.২ ওভার ব্যাট করে আগের দিনের লিডের সঙ্গে আরও ৫১ রান যোগ করে তারা। বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়া ১৯১ রানের।

পঞ্চম দিনে এই রান তাড়া করা খুব যে সহজ ছিল তা নয়। ২২ রানের মধ্যে সৌম্য সরকার আর ইমরুল কায়েস ফিরে গিয়ে তাই প্রমাণ করলেন। এই ধাক্কা সামলে নেন অভিজ্ঞ তামিম ইকবাল সাব্বির রহমানকে সঙ্গে নিয়ে।লাঞ্চে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের স্কোর ৩৮। ততক্ষনে ২ উইকেট চলেও গেছে। শঙ্কা জেগেছে, পারবে তো বাংলাদেশ?

লাঞ্চ থেকে ফিরে লঙ্কানরা একটু তটস্থ হয়ে গেল তামিম-সাব্বিরের অন্য রুপ দেখে। নিজের মত খেলে তামিম ক্যারিয়ারে ২২ তম ফিফটি তুলে নিলেন। এজন্য তাকে বল খেলতে হয়েছে ৮৭টি। সাব্বিরের সঙ্গে তামিমের জুটিটিই আসলে বাংলাদেশের জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছে। সেঞ্চুরি যখন সন্নিকটে তখন তামিম কি মনে করে পেরেরাকে তুলে মারতে গেলেন সেটা তিনিই ভালো জানেন। ৮২ রানে দিনেশ চন্ডিমালের হাতে তালুবন্দি হয়ে শেষ তার ইনিংসটি। সতীর্থের বিদায়ে সাব্বিরও (৪১) বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। পেরেরাকে সুইপ করতে গিয়ে পড়লেন এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি সাব্বির।

এরপর বাংলাদেশকে জেতানোর পুরো দায়িত্ব চলে আসে সাকিব-মুশফিকের কাঁধে। চা-বিরতির পর এসে সেই পেরেরাই সাকিবকে (১৫) ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ধাক্কা দেন। দূর্ভাগ্যজনকভাবে প্লেঅডঅন হয়ে যান আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান। শ্রীলঙ্কার সমর্থকরাও যেন আশা দেখতে শুরু করলেন। তখন ১৬২ রানে ৫ উইকেট নেই বাংলাদেশের। তারওপর পেরেরার বলেই মুশফিককে এলবিডব্লিউ দিয়ে দিলেন আম্পায়ার এস রবি। বিষণ্ন বাংলাদেশের ড্রেসিংরুম। অবশ্য রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান মুশফিক (২২*)। বেঁচে যায় বাংলাদেশের স্বপ্নও। যে স্বপ্নকে পরে সত্যি করেই মাঠ ছেড়েছেন মুশি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআই/আরআইবি